৭০ বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ যেমন আছে তেমনি থাকবে: আপিল বিভাগ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৫৮
ঢাকা: দেশের ১৩টি জেলার ৭০টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সংক্রান্ত নোটিশের ওপর জারি করা রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেননি চেম্বার জজ আদালত। তবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ যেমন আছে তেমনই থাকবে বলে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত। এর ফলে ৭০টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ আপাতত বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা সংক্রান্ত নোটিশের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেননি চেম্বার জজ আদালত। তবে বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় থাকবে বলে স্থিতাবস্থা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে নিয়মিত আপিল দায়ের করতে বলেছেন চেম্বার জজ আদালত।’
এর আগে বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে জারি করা রুল খারিজ করে গত ৩১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি খসরুজ্জামান ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
রায়ে দেশের ১৩টি জেলায় ৭০টি বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ আপাতত বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। কয়েকটি ক্যাম্পে ২০০ কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সেসব বিল আদায়ের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
রায়ে সাময়িকভাবে ইলেক্ট্রনিক প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, মিটার সংযোগ প্রদানের পর বিদ্যুৎ বিল দেবে ক্যাম্প।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, এ দেশে আটকেপড়া উর্দুভাষী অবাঙালিদের (বিহারি) যাবতীয় বিদ্যুৎ খরচ বহন করার দায়িত্ব সরকারের।
তবে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত রেডক্রস বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পগুলোর বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল আর দেবে না।
এরপর ২০১৮ সালের ১ মার্চ ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভায় একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। এতে দেশের ১১৫টি বিহারি ক্যাম্পের মধ্যে ৭০টি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ঢাকাসহ সারাদেশের ৭০টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে নোটিশ পাঠানো হয়।
পরে ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের (ইউএসপিওয়াইআরএম) সভাপতি মো. সাদাকাত খান ফাক্কু, সাধারণ সম্পাদক শাহিদ আলি বাবলু, প্রধান উপদেষ্টা আশরাফুল হক বাবু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি খালিদ হুসাইন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৯ মে দেশের ৭০টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সংক্রান্ত নোটিশের ওপর তিন মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্তকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ ও মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এরপর শুনানির ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন পর গত ৩১ আগস্ট আগের জারি করা সেই রুল খারিজ করে বিচারপতি খসরুজ্জামান ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। পরে রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারীরা।
আজ শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৭০টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। অর্থাৎ বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ যেমন আছে তেমনই থাকবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে নিয়মিত আপিল দায়ের করতে বলেছেন চেম্বার জজ আদালত।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস