Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে ডাকা হতে পারে জি এম কাদেরকে

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:২২

ফাইল ছবি

ঢাকা: অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ডাকা হতে পারে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে (জি এম কাদের)। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায় অর্জিত অর্থ সম্পত্তির বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছে দলটির নেতা মো. ইদ্রিস আলী। অভিযোগটি দুদক কর্তৃপক্ষের নজড়ে এসছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগটি কমিশনে উপস্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বর্তমানে অভিযোগটি যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরপর অভিযোগের সারসংক্ষেপ কমিশন বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে। অভিযোগটি কমিশনে উপস্থান হলেই দুদক কর্তৃপক্ষ জি এম কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের চেয়ারম্যান এবং সচিবের কাছে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগের সারসংক্ষেপ প্রণয়ন করার কাজ চলমান রয়েছে।’

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থাটির সচিব মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘এ সর্ম্পকে আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য উপস্থাপন হয়নি।’

গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির দলীয় এক নেতা জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের উপনেতা জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বিদেশে অর্থ পাচারের কথা উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে জাতীয় পার্টির ৪ (চার) জন মহিলা সংসদ সদস্যের মনোনয়ন কার্যক্রমে ১৮ কোটি দশ লাখ টাকা উৎকোচ নেন জি এম কাদের। উৎকোচের বিনিময়ে ওই চার নারীকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে বলা হয়, জি এম কাদের অতি চাতুর্যতার সঙ্গে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতার অজুহাত তৈরি করে তৎকালীন দলীয় মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন। মূলত দলীয় চেয়ারম্যানের পদবি এবং প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের জন্য জি এম কাদের দলের মহাসচির রাঙ্গাঁসহ কতিপয় তাবেদার নেতাকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে একটি আলাদা বলয় তৈরি করেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর মাধ্যমে মনোনীত নারী সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় সংসদের আসনে মনোনীত করার অঙ্গীকার ও অর্থ প্রদানের শর্তে চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়। এ বিষয়ে একজন নারী সংসদ সদস্যের চুক্তি হয়। যা এরইমধ্যে মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে।এছাড়া ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের মনোনয়নের জন্য ঢাকা-৬ এর সংসদ সদস্য সাবেকমন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ উনার কন্যাকে মনোনীত করার শর্তে মহাসচিবকে ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল দলের কেন্দ্রীয় অফিসটি বৈধভাবে ক্রয় করা। কিন্তু এ অফার গ্রহণ করেননি মহাসচিব।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, তিনজন সদস্য থেকে কমপক্ষে প্রতিজনে ৫ (পাঁচ) কোটি করে মোট ১৫ কোটি এবং প্রয়াত অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে জি এম কাদের গ্রহণ করেছেন। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জি এম কাদের পবিত্র জাতীয় সংসদের আসন নিয়ে অত্যন্ত নগ্নভাবে দলীয় ক্ষমতাকে (চুক্তিপত্র ও শোকজ) ব্যবহার করে মহান জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করার হীন প্রচেষ্টায় বিন্দুমাত্রও বিচলিত হননি। মহান জাতীয় সংসদের পবিত্রতা ‘ক্ষুণ্নকারী’ ও সংসদের ‘ভাবমূর্তি’ ও মর্যাদা জনসমক্ষে ‘হেয় প্রতিপন্নকারী’ এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তির ব্যবস্থা নিতে দুদকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অভিযোগকারী।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়— দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মুত্যুর পর মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করা একটি নামসর্বস্ব প্যাডে এরশাদ সাহেবের দস্তখত তৈরি করেন। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন জি এম কাদের।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়— চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই শুরু হয় দলের পদ-পদবি প্রদানের মাধ্যমে অর্থগ্রহণ করছেন জি এম কাদের। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ৩০১ (তিনশত এক) সদস্যবিশিষ্ট হলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে প্রায় ৬০০ থেকে ৬৫০ জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়— দলের প্রবীন অভিজ্ঞ বহু রাজনৈতিক নেতাকে দলের পদ থেকে বহিষ্কার করে শূন্য পদে এবং নতুন নতুন পদবি সৃষ্টি করে এ যাবত কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে নিজের আত্মীয়-স্বজনের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন ও বিদেশে অর্থপাচার করেছেন।

দলের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা কিংবা সাধারণ সভা না করেই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে গোপন সন্ধির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর-লন্ডন-সিডনিতে অবৈধ অর্থসংগ্রহ ও পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টি জি এম কাদের টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর