বিশ্বব্যাংকের ঋণে আধুনিক হবে কাস্টমস
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:২৫
ঢাকা: আধুনিক হচ্ছে দেশের কাস্টমস ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এজন্য আসছে ১ হাজার ৮৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প। ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে ৪০০ কোটি ৭০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে। এটি বাস্তবায়ন করবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকা।
প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচিত বন্দরগুলোতে ব্যয় দক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও সর্বোত্তম ব্যবহারবিধি অনুযায়ী আধুনিক শুল্ক পদ্ধতি গ্রহণ করে বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাস করা দরকার। বাণিজ্য সম্প্রসারণমূলক শুল্ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের রূপকল্প-২০৪১ এর আলোকে বাণিজ্য নীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন এবং শুল্ক বিভাগের মানবসম্পদ, আর্থিক এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সব পর্যায়ে শুল্ক প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং যথাযথ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে কাস্টমস পরিষেবার কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা হবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত সম্পর্কে জানা যায়, গত ১৮ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় যুক্তিযুক্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে অর্থ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ, কার্যক্রম বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রতিনিধিদের সদস্য রাখা হয়। এই কমিটি গত ৩০ জুন সভা করে। এরপর প্রকল্পের প্রস্তাবিত প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৮৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪০০ কোটি ৭০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে) টাকা হতে ব্যয় কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ৮১ কোটি ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৭৮০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যায়।
আরও জানা যায়, প্রকল্পে ২৭ জন জনবল প্রস্তাব করা হয়েছে (২৫ জন কর্মকর্তা, ২ জন কর্মচারী)। কিন্তু অর্থ বিভাগের জনবল সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ সংযুক্ত করা হয়নি। অর্থ বিভাগের জনবল সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করে তারপর জনবল প্রস্তাব, এ সংক্রান্ত ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে বলে পিইসি সভায় একমত হন সদস্যরা। অর্থ বিভাগের সুপারিশ পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে।
পিইসি সভায় আরও বলা হয়, প্রকল্পে ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ খাতে ৯ ক্যাটাগরির ৫৩ জন জনবল আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয় অর্থ বিভাগের জনবল সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই হতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৫ বছর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরিপত্রের মেয়াদ কমিয়ে নির্ধারণ করা যেতে পারে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বিস্তারিত বিভাজনসহ কাদের জন্য কি বিষয়ে কত দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করতে হবে।
সভায় আরও বলা হয়, অপ্রত্যাশিত ব্যয় খাতে বরাদ্দ রাখা যাবে না, ব্যয় খাত নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। নির্মাণ কাজের ব্যয় প্রাক্কলন কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে, কাদের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে- তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনের (সিআরএমসি) জন্য ১০০টি ডেক্সটপ ও ৫০টি ল্যাপটপ এবং পিআইইউ’র জন্য ৩০টি ডেক্সটপ ও ১০টি ল্যাপটপ ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের জন্য ১২৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে যে সকল সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হবে তার তালিকা ডিপিপিতে সংযোজন করা যেতে পারে। পিআইইউ’র আসবাবপত্রের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনের জন্য আসবাবপত্রের সংখ্যা ও ধরন নির্ধারণ করে এ ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে। ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি মোট প্রকল্প ব্যয় এক শতাংশ হারে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটিতে ২৫ সদস্য এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে ১৫ জন সদস্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ঋণটি কোন পর্যায় আছে সেটি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে চলমান একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার সময় পরবর্তী কোনো প্রকল্পে সহায়তা লাগলে ঋণ দেওয়া হবে বলে প্রাথমিক আলাপ আলোচনা হয়েছে। সুনিদিষ্টভাবে এই প্রকল্প নিয়ে এখনো কিছু হয়নি। ঋণ প্রস্তাবটি এনবিআর থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখান থেকে আসবে ইআরডিতে। তারপরই আমাদের কাছে প্রস্তাব আকারে আসবে। তবে আমরা রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস