৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২০০ কোটি ডলার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:০৫
ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি- জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫৭১ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ৩৭০ কোটি ডলারের পোশাক। ফলে চলতি বছরে দেশটিতে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চীন নিজেরা টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে। তারা এখন হাইটেক পার্ক ও হাই ভ্যালু ইন্ড্রস্ট্রিতে বেশি বিনিয়োগ করছে। আবার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ রয়েছে। সবদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ এখন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। একইভাবে দেশটিতে ভিয়েতনামের রফতানিও কিন্তু বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সামনের দিনে পোশাক রফতানি কিছুটা কমার শঙ্কা রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে দেশের নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমেরিকার বাজারে আগে আমাদের শেয়ার ছিল ৫ থেকে ৬ শতাংশ। সেটা এখন বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পোশাক রফতানি বাড়ার অন্যতম কারণে হচ্ছে, চীন-আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ। চীনের বাইরে আমেরিকার ক্রেতাদের প্রথম চয়েজ বাংলাদেশ। ফলে আমেরিকার ক্রেতারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি পোশাক কিনছে। প্রথম সাত মাসে আমেরিকার বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে এবং সামনের দিনে আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা থেকে আমরা অনেক কটন আমদানি করি। আমরা তাদের কাছে প্রস্তাব করেছি, যেসব কটন আমদানি করি সেইসব কটন দিয়ে উৎপাদিত পোশাক রফতানিতে ডিউটি ফ্রি এক্সেস দিতে। যদি আমেরিকার কটন দিয়ে উৎপাদিত পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় তবে দেশটিতে আমাদের রফতানি আরও অনেক বেশি বাড়বে।’
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম সাত মাসে রফতানি বৃদ্ধি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। ওই সময়ে দেশটিতে এমনিতেও রফতানি ভালো থাকে। নানা কারণেই আমেরিকা থেকে আগের তুলনায় এখন অর্ডার বাড়ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সামনের দিনে দেশটিতে পোশাক রফতানির বাড়া-কমার বিষয়টি নির্ভর করছে তাদের অর্থনীতির ওপর। এখনও বলা যাচ্ছে না, পোশাক রফতানি একেবারেই কমে যাবে কিংবা স্থির থাকবে।’
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এই আয় ছিল ৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে এই আয় ২ দশমিক ৮৯ ও ২০১৯ সালে ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। সেই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
এদিকে, সারাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এই হিসাব ২০২১ সালের সঙ্গে তুলনা করে ২০২২ সালের প্রথম সাত মাসের। অটেক্সার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। চীন ও ভিয়েতনাম থেকে বেড়েছে যথাক্রমে ৪০ ও ৩৫ শতাংশ। তবে রফতানি বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে ভারত। প্রতিবেশি এই দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে চীন ও ভিয়েতনাম। ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের নিচে। অটেক্সার তথ্যমতে, প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রফতানি আয় ১২ দশমিক ৭৯, ভিয়েতনামের ১০ দশমিক ৯১, বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭১, ইন্দোনেশিয়ার ৩ দশমিক ৪১ ও ভারতের রফতানি আয় ৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রাডিশনাল ও সিঙ্গেল মার্কেটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার। সেদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয় বড় বাজার। সেই জায়গায় রফতানি বৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক ও সুখবর। তবে বিশ্ব অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থানে নেই। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি উদ্যোক্তারা। এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমরা ভালো করেছি।’
এই ভালো থাকার কৃতিত্ব উদ্যোক্তা ও সরকারের নীতি সহায়তার বলে উল্লেখ করেন তিনি। সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘সরকার প্রণোদনা দিয়ে যেমন আমাদের পাশে ছিল, তেমনি উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জ নিয়ে রফতানি বাড়িয়েছে। পোশাক রফতানিতে আমরা শীর্ষে থাকলেও আমাদের কোনো প্রাথমিক উপকরণ নেই। আবার পোশাক রফতানিতেও আমাদের লিড টাইম বেশি। এই অবস্থার মধ্যেও আমরা ভালো করছি। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। আশা করি সামনের দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত করোনা মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাদের কেনাকাটা বৃদ্ধির ফলে খুচরা বিক্রি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে মূল্যস্ফীতি, ফেডের হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দার কারণে ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা কতটা টিকে থাকবে, সেটি ভাবনার বিষয়।’ অস্বাভাবিক দীর্ঘ গরমের কারণে শীতের পোশাকের চাহিদাও তুলনামূলক কম বলে জানান তিনি।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট পোশাক রফতানি আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছিল। ফলে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতা বজায় রাখতে পারে। এবং পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে খুচরা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ক্রেতারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম