সংস্কারের পর জানুয়ারিতে চালু হবে বি এম ডিপো
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত মৃত্যুর পর নতুন অবকাঠামো দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোকে। অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম দেখতে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত আন্তর্জাতিক দু’টি কোম্পানির কর্মকর্তারা বিএম ডিপো পরিদর্শন করেছেন। জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর আশা করছেন ডিপো কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এইচ অ্যান্ড এম ও মায়েরস্ক কোম্পানির শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিএম ডিপো পরিদর্শনে যান। এসময় তারা ডিপো ঘুরে অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করেন।
পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন এইচ অ্যান্ড এম’র গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট স্যামুয়েলসন, গ্লোবাল শিপিং লাইনসের ব্রজরন বুমগ্রেন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, পাবলিক এফায়ার্স বিভাগের কার্লেভো এনেলি, শিপিং কর্মকর্তা গুলশান আরা মুন্নি, ফ্রান্সিস গোমেজ এবং মায়েরস্ক কোম্পানির কেসিএম কার্লোস কোয়েলার্ট পেগ, সোফিয়া পার্টোবি, কার্লেন ভ্যান ডার মার্ক, একতা কোহিলী, মানব মেহতা, অভিজিৎ পাল ও রাশেদুজ্জামান রানা।
বি এম ডিপো লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মইনুল আহসান, জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তৌফিকুল ইসলাম, উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল আকতার, ব্যবস্থাপক মো. সাকিব তাদের ডিপো ঘুরে দেখান। এসময় তারা ডিপোর আধুনিকায়ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গত ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বি এম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নেভানো হয়। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এবং ডিপো পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু মানবদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
দুর্ঘটনার চার মাসের মাথায় এসে ক্ষতিগ্রস্ত বি এম কনটেইনার ডিপোটিকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আঙ্গিকে সংস্কার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন লে-আউটের অধীনে একটি তিনতলা অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে তিন লাখ গ্যালন রিজার্ভ পানির ট্যাংক বসানো হচ্ছে। চালু হচ্ছে তিনটি ফায়ার পাম্পের সমন্বয়ে ফায়ার সিস্টেম। দুর্ঘটনায় অক্ষত শেডটির পাশাপাশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেডটি নতুন আঙ্গিকে দ্বিতল করা হচ্ছে।
এ ছাড়া খাদ্যপণ্য রাখার জন্য আলাদা শেড তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ১২ হাজার বর্গফুটের ‘ডেঞ্জারাস গুডসের’ জন্য বিশেষ শেড বানানো হচ্ছে। নির্মানাধীন ফায়ার ফোম সিস্টেমটি আগুন লাগার খবরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল দেবে এবং এর মাধ্যমে মাত্র ১৯ মিনিটে দুই লাখ ৮৬ হাজার বর্গফুটের পুরো শেড ফোম করা যাবে। সীমানা প্রাচীরের নিরাপত্তায় লাইন ক্রসিং ডিটেকশন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এই সিস্টেমে কেউ সীমানা প্রাচীর পার হতে চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পৌঁছে যাবে। এছাড়াও কনটেইনার ও কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে সিস্টেম চালু হলে কনটেইনার-কার্গো যেখানেই থাকবে, তার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে ডিপোতে। এমনকি কনটেইনার মধ্যসাগরে থাকলেও এই পদ্ধতিতে তথ্য জানা যাবে।
দুর্ঘটনার পর ডিপো পরিচালনার জন্য দক্ষ কর্মীবাহিনীও তৈরি করা হচ্ছে। পরিচালনা টিমে পরিবর্তন, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ এবং অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২০ জন কর্মচারীকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিনির্বাপনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু করা হয়েছে।
বি এম কনটেইনার ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মইনুল আহসান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, এরইমধ্যে ডিপো চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৯টি লাইসেন্স নেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিপোটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সার্ভিস ও কোয়ালিটির দিক থেকে এই ডিপোটি বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার মডেল ডিপো হিসেবে সামনে থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে।
উল্লেখ্য, স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন ২৪ একর জায়গার উপর নির্মিত বিএম ডিপো সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রায় ৬০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। আমদানি কনটেইনার ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ২২ হাজার ও ৪০ হাজার টিইইউএস।
সারাবাংলা/আরডি/একে