মানুষের আস্থা বাড়ছে লিগ্যাল এইড সেবায়
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৮
রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় কর্মব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার। গতকাল বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাঙামাটির এই দুই উপজেলায় চারটি এলাকায় নালিশি জমিতে সরেজমিন গিয়ে মীমাংসা বৈঠক, দুইটি ইউনিয়ন পরিষদে ওরিয়েন্টেশন সভা ও ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
এদিন সকাল ৯টায় রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের ২নং শফিপুরে একটি নালিশি জমি সরেজমিন দেখতে যান জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ। এসময় তিনি বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের কথা শোনেন এবং শেষে অভিযোগটি খারিজ করে দিয়েছেন।
এরপর রাজস্থলী-কাপ্তাই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা রাইখালী পুনর্বাসন এলাকায় আরেকটি নালিশি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার একই ইউনিয়নের রাইখালী রিফিউজিপাড়া ও কাজী পাড়ায় আরও দুইটি নালিশি জমি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং একটি নালিশি পরিমাপের জন্য স্থানীয় সার্ভেয়ারকে নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে, নালিশি জমিতে মীমাংসা সভা ছাড়াও রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদ ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ওরিয়েন্টেশন সভা করা হয়। বেলা ১১টায় রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ইউপি চেয়ারম্যান মংক্য উ মারমার সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশন লিগ্যাল এইড সেবাপ্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. জুনাইদ। এসময় স্থানীয় জনসাধারণ, বিচারপ্রার্থী মানুষ ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশন সভায় লিগ্যাল এইডের সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদান সম্পর্কে অবগত করা হয়। শেষে কাপ্তাই উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় স্থানীয় ইমাম-খতিব ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়।
সভায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ বলেন, বাংলাদেশে আইনি সেবা পেতে বিচারপ্রার্থীরা নানান সময়ে ভোগান্তির শিকার হন। অনেকেই ভোগান্তি এড়াতে আইনি সহায়তা পেতে এগিয়ে আসেন। আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকেই আর্থিক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। লিগ্যাল এইড অফিস সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় আইনিসেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। অনেকেই আছেন যারা মামলা চালাতে পারেন না, আমরা তাদের জন্য নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে ৫০ শতাংশের অধিক সিভিল মামলা উভয়পক্ষের সম্মতিতে আপসে মীমাংসা করা হয়েছে। এটি একদিকে আদালতে সিভিল মামলার জট কমাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি খরচে জনগণের কাছে আইনগত সহায়তা পৌঁছে দিতে দেশের ৬৪টি জেলায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অধীনে জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় চালু করে বিচার বিভাগ। মূলত আদালতে বিচারাধীন মামলাজট ও দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্তি এবং স্বল্প সময়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য সংস্থাটি জেলা পর্যায়ে কাজ করছে। রাঙামাটিতেও প্রতিষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সমন্বয় সভা, উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনসহ বিরোধপূর্ণ ভূমিবিরোধ মীমাংসায় কাজ করছে। এছাড়া পারিবারিক এবং সামাজিক বিরোধ মীমাংসায়ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। এতে করে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে লিগ্যাল এইড সেবায়।
জেলা লিগ্যাল এইডের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৫০০টির অধিক আবেদন জমা হয়। এরমধ্যে ৩০০টির অধিক অভিযোগ আপসে বিরোধ মীমাংসা হয়েছে। অফিসে আপসে মামলা নিষ্পত্তির পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে সরেজমিন কাজ করছে লিগ্যাল এইড। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই সেবা কার্যক্রম আরও জনপ্রিয় হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার বলেন, সাধারণ মানুষের আস্থায় পৌঁছাতে পারলে জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হবে। মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন, নালিশি জমিতে গিয়ে মীমাংসা সভা, মতবিনিময় সভা ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
সারাবাংলা/এনএস