‘জামিনে থাকা আসামিরা নজরদারিতে, বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না’
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে গতবছর দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলার যেসব আসামি জামিনে মুক্ত আছেন, তারা নজরদারিতে আছেন বলে নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এবার আবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার পাঁয়তারা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বন্দরনগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ হিসেবে বিবেচিত জে এম সেন হল প্রাঙ্গণ পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
শনিবার দেবী দুর্গার বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, এ বছর মহানগরীতে ২৬৬টি পূজামণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এসব মণ্ডপে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে পোশাকী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশি নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকবে সোয়াট।
‘দুইটি বিষয়ে আমরা নিরাপত্তার কাজ করি, যার একটি শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা ব্যবস্থা যত ভালো হয়, নিরাপত্তা দেওয়া তত সহজ হয়। শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে প্রতিটি মণ্ডপ এলাকায় জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শৃঙ্খলা কমিটি করা হয়েছে। তারা পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। সবার উপস্থিতিতে সার্বজনীন এ উৎসবকে সার্বজনীন নিরাপত্তায় শেষ করতে চাই।’
সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘প্রতিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানোর সময় আমরা প্রত্যাশা করি সবকিছু ভালো হবে। কিন্তু যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতিও আমাদের আছে। প্রতিটি মণ্ডপে পূজা কমিটিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে জেএম সেন হল পূজামণ্ডপ হামলা হয়েছিল। এরপর প্রতিবাদের মুখে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭৬ জনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে আরও অভিযান চালিয়ে মোট ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু গত একবছরে সব আসামি জামিনে বেরিয়ে এসেছে জানিয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।
এ আশঙ্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘যারা জামিনে আছেন তাদের বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে। পুনরায় তারা এ ধরনের কাজ করছে কি না, সেটা নিয়েও ফলোআপে রাখা হয়েছে। গত বছর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।’
তবে এ বছরের পূজায় সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির তথ্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা একটা কড়া মেসেজ দিতে চাই, কেউ যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ঠের কোন কার্যক্রম বা ষড়যন্ত্র করে তাদের অব্যশই আইনের আওতায় আনা হবে। বিন্দুমাত্র ছাড় কাউকে দেওয়া হবে না। আইনের হাত অনেক লম্বা। কেউ কেউ কোন কাজ করে এক সময়ে হয়ত আমাদের বিভ্রান্ত করেছে বা অস্বস্তিতে ফেলেছে কিন্তু আইনের চূড়ান্ত বিচারে তারা পরাজিত হবেন।’
এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ ৯টি স্থানে এ বছর প্রতিমা বিসর্জনের দিনে আলাদা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করার অনুরোধ জানান সিএমপি কমিশনার।
পরিদর্শনের সময় সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম, কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবীর এবং মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ