Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আপনাদের কোমর ভেঙে গেছে, পুলিশের বন্দুকের ওপর হাঁটছেন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:২৬

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনাদের কোমর ভেঙে গেছে, পুলিশের বন্দুকের ওপর ভর করে হাঁটছেন’।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ছাত্র গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ গণজমায়েত আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ এখন শান্তিপূর্ণ মিছিলে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, ছাত্রদলের একেবারেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি, বন্দুক এবং টিয়ার গ্যাস দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে।’

‘বিএনপির হাটু ভেঙে গেছে’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের হাটুভাঙা যে না, তা টের পাচ্ছেন। লাঠিও আমরা নেইনি, কিন্তু আপনাদের ইতিমধ্যে কোমর ভেঙে গেছে।’

‘আপনারা শুধু লাঠি নয়, আপনারা এরইমধ্যে রাম দা, তলোয়ার এবং আরও অনেক কিছু হাতে তুলে নিয়েছেন। আপনাদের এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। আপনারা পুলিশের বন্দুকের ওপর হাঁটছেন। আপনারা জনগণের সঙ্গে নাই, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আপনাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে’- বলেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই সন্ত্রাসী দল। তাদের জন্ম হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। একদিকে তারা বলে- সোনার ছেলেদের (ছাত্রলীগ) হাতে কলম তুলে দিয়েছি। অন্যদিকে ওই সোনার ছেলেদের হাতে তারা বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, শোটা তুলে দেয়।

বিজ্ঞাপন

সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে শুধু নয়। তারা ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। ইডেন কলেজে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে, চুলোচুলি করে একটা ন্যাক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেরাই তাদের কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কোনটা বাকি, কোন বিশ্ববিদ্যালয় বাকি? সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে এই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।’

দলীয় কর্মসূচিতে হামলার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেছি জ্বালানি তেল, চাল, ডাল, তেল, লবনের দাম কমানোর জন্য। সেই আন্দোলনে পুলিশে গুলিতে ছাত্রদলের নূর এ আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিমকে হত্যা করেছে, তারা নারায়ণগঞ্জের শাওয়ানকে হত্যা করেছে, তারা হত্যা করেছে মুন্সীগঞ্জের শাওনকে।’

শুধু তাই নয়, জনগণ যখন জেগে উঠছে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য তখন এটাকে দমন করতে তারা সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে।’

‘এভাবে অসংখ্য ছাত্রকে, অসংখ্য নেতাকে, অসংখ্য বিএনপিকর্মীকে তারা আহত করছে, গুলি করেছে। কী মিথ্যাচার তাদের! মুন্সীগঞ্জের এসপি বললেন-শাওন নাকি ইটের আঘাতে মারা গেছে! কিন্তু শাওনের যখন ডেথ সার্টিফিকেট দেয়, তখন ডাক্তাররা পরিষ্কার করে বলেছেন ‘ম্যাসিভ হেড ইনজুরি ডিউ টু গান শর্ট (Massive head injury due to gun short).’ তারা (পুলিশ কর্মকর্তারা) মিথ্যাচার করবে না কেন? প্রধানমন্ত্রী তো বিদেশে গিয়ে সমানে মিথ্যাচার করছেন’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, মানুষের নিত্য প্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন চালাচ্ছ, গুম করছ, মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করছে। কিন্তু আজকে জনগণের উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে।’

ছাত্রদলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই দেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, তা শুধু ছাত্রদের আন্দোলনে পরিবর্তন হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি- এবারও যে পরিবর্তন হবে, তা হবে ছাত্রদলের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’

‘আজকে দায়িত্ব একটাই- দেশের ছাত্রসমাজকে, যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে। সেটাই হবে প্রকৃত জবাব’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে। দেয়ালের লিখন পড়ুন। ওই সমস্ত উল্টা-পাল্টা কথা না বলে পদত্যাগ করুন। সেভ এক্সিট নেন এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন। আমরা নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে, নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করব- এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসালাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় ছাত্র গণজমায়েতের অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দীন আলম প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

মির্জা ফখরুল আলমগীর হামলার প্রতিবাদ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর