Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ব হৃৎপিণ্ড দিবসে আমাদের দায়িত্ব


২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:৫০

মানুষ তাঁর হৃদয় যতনে কতটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারছে? গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাচ্ছে যে, মন এর উৎস হলো হৃৎপিণ্ড এবং সেখান থেকে মস্তিষ্কে যেয়ে বলছে, বোধের খোলস খুলে আমাকে বের করে নাও। সেই হৃদয় পবিত্র আত্মায় পরিণত হতে পারে, যদি সর্বদা মহান সৃষ্টিকর্তার আরাধনায় থাকা যায়। কিন্তু, আমাদের অনেকেই হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখার চেষ্টায় থাকি না।

এদিকে আজ বিশ্ব হৃৎপিণ্ড দিবস। বিশ্ববাসীকে হৃদরোগ ও স্ট্রোক ইত্যাদি জীবননাশী রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০০০ সাল থেকে ফলত ‘বিশ্ব হৃদয় দিবস’ পালন করে আসা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) কর্তৃক উদ্যোগে বিশ্ব হৃৎপিণ্ড দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘ইউজ হার্ট ফর এভরি হার্ট’। সূত্রমতে বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ন্যাশানাল হার্ট ফাউন্ডেশন দিবসটি পালন করছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতই রোগের তুলনায় হৃদরোগে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি দুই মিনিটে বাংলাদেশে একজন মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। আর প্রতি ঘণ্টায় মারা যায় প্রায় ৩২ জন মানুষ। একদিনে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭৬৯ জনে। যার সংখ্যা মাসে ২৩ হাজার ৮৩।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ, যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক। তামাক ব্যবহারজনিত অসুখে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। তামাক সেবনের দায়ে সারা পৃথিবীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বে ১৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা কতটা উদাসীন না হলে মনকে ধীর মাদকের আসক্তিতে নিয়ে যেয়ে নিজেকে শেষ করছি !

বিজ্ঞাপন

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের দিকে যাওয়া যাক। প্রতিটি হৃদয়ের জন্য একটি হৃদয়-এমন স্লোগানকে ধারণ করার দরকার। অথচ, আমরা নিজেরাও অসতর্ক হয়ে নিজেকেই ভালবাসতে পারছি না। অন্যকে কীভাবে হৃদয় দেব? হৃদয় পানে হৃদয় টানে, এমন সুরে ধ্বনিত হয়ে আমরা কী গাইতে পারছি? চলতে পারছি?

রাজধানী ঢাকার কথাই ধরা যাক। আমরা যারা দায়িত্বশীল পদ নিয়ে কাজ করছি, তাঁরাও জনসচেতনতায় নিজেদেরকে সঁপে দিতে পারছি না। আজকের বিশ্ব হৃৎপিণ্ড দিবসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ন্যাশানাল হার্ট ফাউন্ডেশন শুধু কর্মসূচি পালন করলে হবে না। ঢাকার দুই প্রান্তের দুই মেয়র, সংসদ সদস্যের অনেক ভুমিকা রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জনমানুষকে প্রতিদিনই বলতে হবে যে, আপনারা আপনাদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় পরিমিত খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন। প্রজন্মকে বলতে হবে, তোমরা তামাকমুক্ত জীবনকে আলিঙ্গন কর।

অন্যদিকে খেলার মাঠ বাড়ানো, প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঠগার নির্মাণ করে দিতে পারলে প্রজন্মের হাতে সিগারেট কমে আসত বলে আমি মনে করি। কাজেই যারা সমাজের, রাষ্ট্রের অভিভাবক হবেন, আসলে তাঁদেরকেই আগে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে।

রাজধানীর কয়েকটি অভিজাত এলাকা বাদ দিলে প্রকৃতিময় পরিবেশ এর অবকাঠামো দাঁড় করাতে পারছি না। আমরা যারা নগর সেবক হচ্ছি, করতে পেরেছি কিনা? পারা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যই সকল সুখের সম্পদ। আমাদের সিনিয়র সিটিজেন তেমন সুন্দর পার্ক পাচ্ছে না। তাঁরা ভোর, সকাল কিংবা সন্ধ্যা করে যে হাটবে, তেমন পারিপার্শ্বিকতা অন্তত রাজধানী ঢাকায় অনুপস্থিত।

হৃদয়কে ভালো রাখার জন্য ঘরের সদস্যদের অসচেতনতা, বাজারের ভেজাল খাদ্য পণ্য, সমাজে প্রকৃতির কাছে বন্দী না থাকা-সব মিলিয়ে হৃদয় তোমায় দেব ক্যামনে, যদি না থাকে আমারই মন !

সঙ্গত কারণে উত্তরণের পথে যেতে হবে। প্রথমত, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন জরুরি। দ্বিতীয়ত, তরুণ সমাজকে তামাকমুক্ত জীবনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তৃতীয়ত, পুরো বাংলাদেশের সবুজ ঐতিহ্যকে যান্ত্রিক জীবনের সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে।

মানুষ তাঁর হৃদয় দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুক যে, সে অন্যের জন্যও প্রস্তুত। তবে আগে নিজের সুস্থতা জরুরি। তখনই সে পারবে অন্যের জন্য হাত বাড়াতে। এভাবেই আমরা মানবিক সত্তায় বিভোর হয়ে বাংলাদেশকে, এই পৃথিবীকে সুমসৃণ রাস্তা দেখাতে পারি। যে পথের পথিক হয়ে আমি আমার মনকে মানবিক করেই বলেছিলাম, এসো গড়ি ঢাকা কে, বাংলাদেশকে।

লেখক: রাজনীতিক, সমাজকর্মী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর