ফেসবুকে স্ত্রীসহ এমপি নদভীকে ‘অপমান করায়’ মামলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে নয় জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ জহিরুল কবিরের আদালতে সাংসদ নদভীর পক্ষে সাতকানিয়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- মুহাম্মদ শুয়াইব বিন হাবিব, শরীফ মাহমুদ, ইউসুফ বিন হোসাইন খান, এ এস এম এহসানুল হক, ইউসুফ আহমেদ, কবির আহমেদ, ইকবাল হাফিজ, সাইফুল ইসলাম ও মাহমুদ মিনহাজ।
ট্রাইব্যুনালের পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য ও তার স্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজন কটূক্তি করেছেন। এজন্য সাংসদের পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’
আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসানের সংসদ সদস্য এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনিও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর আইআইইউসি’র পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজে শেয়ার হয়। আইআইইউসি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন কয়েকজন ফেসবুকের পেইজে গিয়ে সাংসদ ও তার স্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করে তাদের অপমান, অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করেন।
মামলায় কটূক্তিকারী নয়জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮ এর ২৪, ২৫ ও ২৯ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের পরিচয় জানতে চাইলে পিপি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, তারা রাজনৈতিকভাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাংসদ নদভী সাহেবের বিরোধী পক্ষের লোক।’
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার সিংহভাগ অর্থায়নে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরায় নিজস্ব ক্যাম্পাসের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও দু’টি ক্যাম্পাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হতো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ক্যাম্পাস বন্ধ করে এখন শুধুমাত্র সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে।
অভিযোগ ছিল, এক সময় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো না। শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হতো। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা ও সংঘটনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল। শুরু থেকেই গোলাম আজমসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন, যাদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন।
২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াত ঘরানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জনের যে জোরালো দাবি উঠেছিল, তাতে এই আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও ছিল।
প্রতিষ্ঠার পর ২৬ বছর ধরে জামায়াত ঘরানার লোকজন দিয়ে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা হয়ে আসছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সাংসদ ও মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং তার অনুসারীদের। একই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও বিদেশ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পরে তাকে বিদেশ বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নদভীর অনুসারীদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী এমপিকে বিদেশ বিভাগের পদ থেকে সরিয়ে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কৌশলে বের করে দেন জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম। এ অবস্থায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ দুই বছরের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। ২০২১ সালের ১ মার্চ শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। যাতে সভাপতি করা হয় নদভীকে। বর্তমানে ২১ জন নিয়ে গঠিত ট্রাস্টিবোর্ডের অধিকাংশই সরকারি ঘরানার হিসেবে পরিচিত।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম