Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৫৬

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষসহ এর নির্বাচিত ছয় সদস্য।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) প্যাড ব্যবহার করে বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত ওই ছয় আইনজীবী প্রধান বিচারপতির কাছে এই অভিযোগ দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

লিখিত আবেদনে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ নির্বাচনের প্রচারণায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের অংশ নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ এনে এই ছয় আইনজীবী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তবে আইনজীবী সমিতির প্যাড ব্যবহারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও মুখপাত্র আব্দুন নূর দুলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কাছে দরখাস্ত পাঠানোর বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কেউ যদি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্যাড ব্যবহার করে, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ কাজ। এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রধান বিচারপতির কাছে ছয় আইনজীবীর দাখিল করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের মানুষের বিচার পাওয়ার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে এদেশের সব মানুষ তাদের বিচার পাওয়ার আশায় এবং সাংবিধানিক সংকটে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। আদালত তার সততা, নিরপেক্ষতা, প্রজ্ঞা ও আইনের আলোকে দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে থাকেন। এদেশের মানুষ এখনো এটাই বিশ্বাস করে। একজন বিচারপতি যখন বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন তখন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অন্য সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ বিচার করে থাকেন। আইনের আলোকে সুষ্ঠু বিচার করা যেমন জরুরি, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে, নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া যাবে, এই বিশ্বাস থাকাটাও জরুরি। বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার আবশ্যকতায় সিভিল আপিল নম্বর ০৬/২০১৭ বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য বনাম অ্যাভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী এবং অন্যান্য মামলায় বিচারপতিদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

লিখিত আবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, মিডিয়ায় ও ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই মতবিনিময় সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন এবং মাইক হাতে ওই বিচারপতিকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। ওই মত বিনিময় সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য প্রার্থী বিচারপতিকে তার স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওই সভাকে রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের মত বিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত নিম্নলিখিত আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।

(১৫) ‘A Judge should not engage in any political activities whatsoever in the country and abroad’

(২১) ‘A Judge shall not enter into public debate or express his views in public on political matters or on matters that are pending or are likely to arise for judicial determination’.

আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করি ওই ঘটনার মাধ্যমে বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাই এ বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সিনিয়র সহ-সম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম আকতার জাকির, মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম ওই আবেদনে সই করেছেন। তারা গত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে জয়ী হয়েছেন।

প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ের জামাতা হলেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খুরশীদ আলম সরকারের স্ত্রী এবং ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলী। এ বিষয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী বলেন, ‘আমি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে আমি সেখান থেকে সরে এসেছি। যে কারণে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আমার বাড়িতে বাবার অনুসারী বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা আসেন। তখন মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে সান্ত্বনামূলক বক্তব্য দিই। পরে বাবার জন্য মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই আমার স্বামী বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সে মোনাজাতে উপস্থিত ছিলেন।’

উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার পর আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছিলেন রিপন। মোনাজাত শেষে তিনিও (মাহমুদ হাসান রিপন) আমার বাড়িতে আসেন। এরপর উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি বক্তব্য দেন। এরপর আমার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন আমার স্বামী বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার।’

এদিকে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন গত ১৫ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক পেজে বিচারপতির সঙ্গে থাকা ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে নৌকা মার্কার বিজয়কে সফল করার লক্ষ্যে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলীর আহ্বানে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময়।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

আচরণবিধি বিচারপতি লঙ্ঘন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর