ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৪৬৫২ বিনিয়োগকারীকে ১৩৯.৬ কোটি ফেরত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৫৯
ঢাকা : ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ( আইএলএফএসএল) ৪ হাজার ৬৫২ জন স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগকারীকে দুই বছরে ১৩৯ কোটি ৬০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই বছরে এই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বকেয়া আদায় করেছে। বকেয়া আদায় করা অর্থ থেকেই দায় মেটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উচ্চ আদালত থেকে নিযুক্ত আইএলএফএসএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আইএলএফএসএল’র পুরানা পল্টনের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য দেন।
এর আগে একইস্থানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ২৬তন বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আইএলএফএসএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান। সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মশিউর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অব.) মো. সফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মেফতাউল করিম (অব.), ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফ আলী এবং মো. এনামুল হাসান প্রমুখ।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বার্ষিক কর্মকাণ্ড উপস্থাপনের সময় বলেন, ‘২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সামগ্রিক ব্যয় ২১ শতাংশ কমেছে, সুদের আয় প্রায় একই পর্যায়ে ছিল, তবে তা বাড়বে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ৭০ শতাংশ সামগ্রিক ক্ষতি কমানো হয়েছে। সংস্থাটি পুনরূদ্ধার প্রক্রিয়া ও এর গতিশীলতা ত্বরান্বিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যালেন্সশীট পুনর্গঠন করার জন্য কাজও চলছে।’
সংস্থাটি এরইমধ্যে আমানত ও ঋণের দায়কে ইক্যুইটিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট-এর সাথে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট পরিষেবার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার মাধ্যমে সামগ্রিক দায়ের সাথে অর্জিত সম্পদের পরিপূরক সহাবস্থান বজায় রেখে নগদ প্রবাহ সৃষ্টির পথকে মসৃণ করবে।
মশিউর জানান, সংস্থাটির দীর্ঘমেয়াদী ক্রেডিট রেটিং ট্রিপল বি প্লাস)-এ উন্নীত হয়েছে এবং পুনর্গঠন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। জুন, ২০২০ সাল থেকে উচ্চ আদালত থেকে নিযুক্ত স্বাধীন পর্ষদের নেতৃত্বের প্রতি অনুগত এবং তাদের প্রণীত নিয়ম ও প্রবিধান অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আইএলএফএসএল-এর একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান আইএল ক্যাপিটাল ২০২০ সালে ৭৫ লাখ টাকার নীট লোকসান থেকে চলতি বছর ২.৮৫ কোটি নীট মুনাফা অর্জন করে রেকর্ড করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে এবং ২০২২ সালের জুনে আইএলএফএসএল-কে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। আরেকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ ২০২০ সালের নীট লোকসান ১৩৭ মিলিয়ন থেকে ২০২১ সালে ২৩ মিলিয়নে নামিয়ে এনে রেকর্ড করেছে। ঋণের দায়কে ইক্যুইটিতে রূপান্তরিত করে ব্যালেন্সশীট পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালেল ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল।২০১৯ সালে ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলসের অবসায়নের আবেদন করে। একই বছরের ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দিলে ১০ জুলাই অবসানের বিষয়টি অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে পিপলস লিজিংয়ের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি সংগঠন এবং ব্যক্তি শ্রেনীর বিনিয়োগকারীদের আটকে রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪২১ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/একে