Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহকর্মীকে এসিডে ঝলসে দেওয়ার ২৪ বছর পর ধরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ অক্টোবর ২০২২ ২১:১২

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সহকর্মীকে এসিডে ঝলসে দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে দুই যুগ ধরে আত্মগোপনে থাকা এক ব্যক্তিকে চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এসিড নিক্ষেপের মামলায় এরইমধ্যে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

সাজা পরোয়ানামূলে শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে তিনটার দিকে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার মেহের স্টেশন রোড থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার কামাল হোসেন চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের রসুল করিমের ছেলে। আর এসিডে ঝলসে যাওয়া হাফেজ মোহাম্মদ জাকারিয়া বর্তমানে সৌদি আরবে আছেন।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের সামনে দি মেট্রো রেফ্রিজারেশন নামে একটি ফ্রিজ মেরামতের দোকানে কামাল হোসেন ও হাফেজ মোহাম্মদ জাকারিয়া চাকরি করত। মালিক দোকান বিক্রির উদ্যোগ নিলে জাকারিয়া সেটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে কামালের মনে ঈর্ষা তৈরি হয়। এরপর থেকে কামাল জাকারিয়ার সঙ্গে অহেতুক ঝগড়া ও তর্ক-বিতর্ক করত।

১৯৯৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মালিকের অনুপস্থিতিতে দোকানে কামাল ও জাকারিয়ার মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে কামাল দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। পরদিন হরতালের কারণে দোকান বন্ধ ছিল। কিন্তু কামাল তাকে ফোন করে জরুরি কথা আছে জানিয়ে দোকানে আসার জন্য বলে। সকাল ৯টার দিকে জাকারিয়া দোকানে এলে কামাল একটি মগে করে এসিড নিয়ে এসে বেলে- তোর জন্য চা এনেছি। জাকারিয়া চা খেতে না চাইলে ক্ষিপ্ত মগভর্তি এসিড তার মুখে ছুড়ে মারে। তার চোখ, মুখ, বুক, হাতে এসিডে ঝলসে যায়। এসিড নিক্ষেপের পর জাকারিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করতে কামাল তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে এবং কয়েকটি লাথি মেরে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর জাকারিয়া মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। এ সময় আয়নায় নিজের চেহারা দেখে অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যান। একমাস পর তার জ্ঞান ফেরে এবং চিকিৎসকদের চেষ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। পরে তিনি সৌদি আরবে চলে যান।

এ ঘটনায় ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জাকারিয়ার বাবা বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পলাতক কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ কামালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদণ্ড দেন। পলাতক কামালের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সহকারী পরিচালক নুরুল আবসার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে পুলিশ নানাভাবে আসামি কামালকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে। তবে গত ২৪ বছরেও তাকে গ্রেফতার সম্ভব হয়নি। আমরা সাজা পরোয়ানামূলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করেছি।’

কামালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর কামাল চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে নিজ এলাকা চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ চলে যায়। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত স্টুডিওর কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। এরপর ২০০৩ সাল পর্যন্ত নিজ এলাকায় কৃষিকাজ করত। এর মধ্যেই সে আবার বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে চার বছর কারাগারে ছিল। ২০০৭ সালে মুক্তি পেয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে যাত্রাবাড়িতে কাচাঁমালের আড়তে সবজির পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা শুরু করে। ২০১০ সালে সে ওই ডাকাতির মামলায় আবারও গ্রেফতার হয়। এক বছর পর ছাড়া পেয়ে নিজের এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে কৃষিকাজ শুরু করে। ২০১৩ সালে শাহরাস্তিতে গিয়ে জমি কিনে বালুর ব্যবসা শুরু করে। এর ফলে অপরাধী হিসেবে নিজেকে আড়াল করতে সক্ষম হয় কামাল।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার কামালের বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতি, নাশকতা ও মাদক আইনে লক্ষ্মীপুরে রায়গঞ্জ এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় আরও ৭টি মামলা আছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

এসিড নিক্ষেপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর