খোরপোষ কৃষি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা
২ অক্টোবর ২০২২ ১০:৫৬
ঢাকা: খোরপোষ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের জন্য ১ হাজার ৪৪০ জন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে।
পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় উচ্চমূল্য ফসলের উৎপাদন ১২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং জমির উৎপাদনশীলতা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি ও মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণসহ ফসল সংগ্রহ করে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উচ্চমূল্য ফসলের সংগ্রহ করে ক্ষতি ১০ শতাংশ হ্রাস করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দিনাজপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সমভূমির উঁচু ও মাঝারি উঁচু অঞ্চলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ, নতুন ফসল অন্তর্ভুক্ত করা, উচ্চমূল্যের ফসল চাষসহ জলবায়ু ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম লাগসই কৃষি প্রযুক্তি নেওয়ার মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোর পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও শিল্পায়নের প্রভাবে এ অঞ্চলে কৃষি পরিবেশ ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক কারণে ক্রমান্বয়ে ধনী কৃষকেরা কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় কৃষি চলে যাচ্ছে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির হাতে। এতে মূলধনের অভাবে ফসলের ভাল ফলনের প্রয়োজনীয় উপাদান সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় ফলন কম হচ্ছে। এ কারণে দেশের শিক্ষিত নারী, তরুণ ও যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে পুষ্টিকর উচ্চমূল্যেও ফসল উৎপাদন ও বিপণনের অঞ্চলভিত্তিক সম্ভাবনা, সুযোগ এবং সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থা প্রর্বতনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখার তাগিদ থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- প্রযুক্তি প্রদর্শনী, ১ হাজার ২২৪টি মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি, ২ হাজার ৩৮০টি বিশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শনী, ৫টি কৃষক কেন্দ্র নির্মাণ, ১৫৫টি বিদ্যুৎবিহীন কুলিং চেম্বার নির্মাণ, ৮টি পলিনেট বা শেড হাউস, ৯২টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, ২ হাজার ১৩৫টি মাঠ দিবস, ১২টি কৃষি প্রযুক্তি মেলা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলা, বিরল, বীরগঞ্জ, কাহারোল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, খানসামা, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট উপজেলা। ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল এবং হরিপুর উপজেলা। পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর, তেতুঁলিয়া, আটোয়ারী, বোদা এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রংপুর বিভাগের দিনাজপুর অঞ্চলে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন, শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র আনা, নিরাপদ ফসল উৎপাদন, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ এবং জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণে আধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যক্রম সম্প্রসারণে প্রকল্পটি ভাল ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিনাজপুর অঞ্চল দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষি অঞ্চল। এ অঞ্চলের কৃষি প্রকৃতি, কৃষি বৈচিত্র্য, কৃষি পরিবেশ ও সম্ভাবনার ওপর ভিক্তি করে আঞ্চলিক প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/জেজে/এনএস