Thursday 26 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৫ বছর ধরে প্রবাসীদের অজ্ঞান করে সব লুট করতেন তারা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ অক্টোবর ২০২২ ১৪:০৯

ঢাকা: রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১৫ বছর ধরে প্রবাসীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিত একটি চক্র। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) চক্রের মুলহোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। র‌্যাবের দাবি, গ্রেফতাররা প্রায় তিন শতাধিক প্রবাসীকে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করেছে। মুলহোতা মো. আমির হোসেন ১৫টির অধিক মামলার আসামি। এ সময় লুট হওয়া সোনা, মোবাইল এবং অজ্ঞান করতে ব্যবহৃত উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এর আগে, গতকাল শনিবার (১ অক্টোবর) রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা এলাকা থেকে এই চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এ বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ যাত্রীদের/ব্যাংকে আগত গ্রাহকদের টার্গেট করে থাকে। গত ২ সেপ্টেম্বর কুয়েত প্রবাসী জনৈক ব্যক্তি হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ সময়ে এয়ারপোর্টে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে টার্গেট করে ও ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে তাকে অজ্ঞান করে তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে মো. আমির হোসেন (৫২) ও তার সহযোগী মো. লিটন মিয়া মিল্টন (৪৮), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫), এবং জাকির হোসেনকে (৪০) গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। ওই সময় মোবাইল ফোন, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত ট্যাবলেট, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাইকৃত সোনা (যার রূপ পরিবর্তন করতে গলানো হয়েছে) উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে বিগত ১৫ বছর যাবৎ পারস্পারিক যোগসাজসে রাজধানীর বিমানবন্দর টার্মিনালে ওত পেতে থাকে এবং বিদেশ হতে আগত ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করে। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল। গাড়ি বা বাসে ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা টার্গেট করা ব্যক্তিকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করতেন। এরপর ওই ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে গেলে তার কাছে থাকা যাবতীয় মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যেত।

বিজ্ঞাপন

গত ২ সেপ্টেম্বর ভোর বেলা কুয়েত প্রবাসী জনৈক ভুক্তভোগী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর চক্রটির একজন সদস্য বিমানবন্দর হতে ওই প্রবাসীকে অনুসরণ করতে থাকেন। ভুক্তভোগী উত্তরবঙ্গে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছায়। এরপর উত্তরবঙ্গগামী বাস কাউন্টারে টিকেট কাটতে গেলে কাউন্টারে পূর্ব থেকে প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকা গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন ভুক্তভোগীকে জানান, তার নিকট একটি অতিরিক্ত বাসের টিকেট রয়েছে। পূর্ব থেকে সাজিয়ে রাখা একটি লাগেজ ও কিছু কুয়েতি দিনার দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি নিজেও একজন প্রবাসী। আমির হোসেনকে সরল বিশ্বাসে তার নিকট হতে টিকেট ক্রয় করে পাশের সিটে বসে বগুড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন ভুক্তভোগী। কিছুক্ষণ পরে চক্রের মূলহোতা আমির হোসেন ভুক্তভোগীকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খেতে দেন। বিস্কুট খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে ভুক্তভোগীর সকল মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়ে পথিমধ্যে নেমে যায় চক্রটি। পরবর্তীতে বাসের সুপারভাইজার ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আমির হোসেন জানান, তিনি বিমানবন্দর কেন্দ্রীক একটি অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূলহোতা। তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে বিগত ১৫ বছর যাবৎ এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি প্রায় ৩০০ জনকে অজ্ঞান করে তাদের নিকট হতে মূল্যবান মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়েছেন। চক্রের আরও ৬-৭ জন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে একাধিক সদস্য বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছেন। গ্রেফতারকৃত আমির হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং বারবার কারাভোগ করেছেন। বর্তমানে জামিনে আছেন তিনি।

গ্রেফতার লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে মাইক্রোর ড্রাইভার পেশার আড়ালে দীর্ঘ ৩/৪ বছর যাবৎ আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছেন। এর আগে একাধিকবার একই ধরনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় চক্রটি কৌশলে প্রবাসী যাত্রীদের মাইক্রোবাসে পরিবহন করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। তখন মাইক্রোবাসের চালনার দায়িত্বে থাকেন তিনি।

গ্রেফতারকৃত আবু বক্কর পারভেজ ৮/৯ বছর বিভিন্ন জুয়েলারির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে গত ৬/৭ বছর পূর্বে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে নিজের জুয়েলারির দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। এই দোকানের আড়ালে বিগত ২/৩ বছর যাবৎ চক্রটির লুট করা সোনা গ্রহণ, রূপ পরিবর্তন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।

গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। গত ৩/৪ বছর পূর্বে আমিরের মাধ্যমে এই চক্রে যোগ দেন তিনি। তিনি লুটকৃত সোনার গয়না ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সারাবাংলা/ইউজে/এনএস

অজ্ঞান পার্টি টপ নিউজ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের আহ্বান বিএনপির
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫

সম্পর্কিত খবর