দেশেই ভ্যানিলা চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন
৩ অক্টোবর ২০২২ ০৮:০০
ঢাকা: পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলা জাফরান। আর দ্বিতীয় দামি মসলা বলা হয়ে থাকে ভ্যানিলা বা ‘ব্ল্যাক গোল্ড’কে। ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কার বিশ্বের সর্বোচ্চ ভ্যানিলা উৎপাদনকারী দেশ। ইতোমধ্যে ভারতেও এর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। তবে সুখবর হলো- বাংলাদেশেও এবার এই মসলাটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
দেশের মাটিতেই বাণিজ্যিকভাবে চাষের টেকনোলজি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিন। ২০০৪ সাল থেকে ভ্যানিলার চাষপদ্ধতি ও সহজতর পরাগায়ন নিয়ে গবেষণার পর সফল হন এই গবেষক। অধ্যাপক জামালের মতে, এই মসলার বাণিজ্যিক উৎপাদন বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব রাখবে।
বেকারি ও নির্যাস শিল্পের অন্যতম উপাদান ভ্যানিলা। এই মসলার কেজিপ্রতি পডের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পরাগায়ন জটিলতার কারণে মসলাটি এতদিন দেশে উৎপাদন করা যাচ্ছিল না। সেজন্য আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশকে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের টেকনোলজি উদ্ভাবনের ফলে এখন থেকে দেশেই ভ্যানিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ভ্যানিলা মূলত অর্কিড জাতীয় গাছ। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়, আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়। ছায়া পছন্দকারী উদ্ভিদটি মাটির সংস্পর্শে যাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রেখে খুঁটির সঙ্গে নেট দিয়ে কোকোডাস্ট বেঁধে সাপোর্ট তৈরি করে দিতে হয়। এছাড়া গাছটি বেড়ে ওঠার সময় পরাগায়নের সুবিধার জন্য হাত দিয়ে ওঠানামা করিয়ে দিতে হয়।
মূলত কাটিং পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই উদ্ভিদটি জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ ঝরঝরে মাটিতে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মাটির pH ৫.৩ থেকে ৫.৬ রাখতে হয়। ভ্যানিলা চারা রোপনের ৩ থেকে ৪ বছর পরে ফুল আসতে শুরু করে। একেকটি থোঁকায় ১৫-২০টি ফুল থাকে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি করে পড হয়।
ভ্যানিলা উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা এর ফুলের বৈচিত্র্যময় গঠন। যা স্বাভাবিক পরাগায়নের বাধা দেয়। সাধারণত প্রাকৃতিক পরাগায়নের উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন করা হয়ে থাকে। ভ্যানিলা ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ডের মাঝে ঠোঁট সদৃশ একটি পর্দা (রোস্টেলাম) থাকায় পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে পতিত হতে পারে না।
এ বিষয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পর্দাটি নিডল দিয়ে সরিয়ে সামান্য চাপ দিলেই পরাগায়ন সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে কাজটি করতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। একজন দক্ষ শ্রমিক দিনে এক হাজার থেকে দেড় হাজার ফুল পরাগায়ন করতে পারবেন।’
তিনি জানান, পরাগায়ন থেকে পড পরিপক্ক হতে ছয় থেকে মাস সময় লাগে। বছরে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৬০০ কেজি কিউরড পড সংগ্রহ করতে পারবে একজন কৃষক। পড পরিপক্ক হওয়ার শেষের দিকে এতে গ্লুকোভ্যালিন উৎপাদিত হয়। যা ফারমেন্টেশনের সময় গ্লুকোজ ও ভ্যানিলিনে পরিণত হয়। আর এই ভ্যানিলিন থেকেই তৈরি হয় এর মোহনীয় নির্যাস।
তিনি বলেন, ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে ইতোমধ্যে ভ্যানিলা উৎপাদন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে ভ্যানিলা কেটে ছাদ বাগানের শত শত মালিকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানিও করা যাবে এই অর্থকরী ফসল। এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষক জামাল উদ্দিন।
সারাবাংলা/পিটিএম