Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রক্টর বলছেন ‘নাশকতাকারী’, বিভাগের দাবি ‘ভালো ছাত্র’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে প্রক্টরিয়াল বডি’র সদস্যরা আটক করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তবে সেই শিক্ষার্থীকে ‘খারাপ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক’ কোনো কাজে জড়িত নয় বলে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিফাত শারমিন। আর ওই প্রত্যয়নপত্র আদালতে দাখিল করে সেই ছাত্রের জামিন আবেদন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চবির প্রক্টরিয়াল বডি ও আইন বিভাগের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থানে ‘বিস্মিত’ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারের মতামত নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। তবে আইন বিভাগের সভাপতি বলেছেন, প্রত্যয়নপত্রটি ওই শিক্ষার্থী মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবহার করবে জানলে তিনি দিতেন না।

গত ২৪ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা জোবায়ের হোসেন সোহাগ (২১) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সোমবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁঞার আদালতে জোবায়ের হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানি হয়। আদালত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এ বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামিন আবেদনের সঙ্গে আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের একটি প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করেন। সেখানে বলা হয়েছে, আসামি কোনো খারাপ কাজে জড়িত নয়, রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সে ভালো ছাত্র। ওই শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল প্রক্টরিয়াল বডি। থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। আবার আইন বিভাগের সভাপতি বলছেন ভালো ছাত্র। এটা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।’

‘এ অবস্থায় আমি জামিনের বিরোধিতা করে বলেছি, ওই ছেলেকে আটকের পর নাশকতার পরিকল্পনার বিভিন্ন ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। সেগুলো মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাহলে সেগুলো কী মিথ্যা? যেহেতু প্রক্টরিয়াল বডি ও আইন বিভাগের মধ্যে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের ঊর্ধ্বতন হিসেবে রেজিস্ট্রারের মতামত নেওয়া যেতে পারে। অথবা এরও ঊর্ধ্বতন কারও বক্তব্য আদালতে শুনতে পারেন। তারপর জামিনের বিষয়ে আদেশ দেয়া সমীচীন হবে। আদালত আগামীকাল (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে আদেশ দেবেন’- বলেন ইফতেখার সাইমুল।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ২৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে সিএন‌জি অটোরিকশা চালকদের সি‌ন্ডি‌কে‌টের বিরু‌দ্ধে চলমান সমস্যার প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করেন একদল শিক্ষার্থী। পরে অবস্থানকারীদের প্রক্টর অফিসে ডাকা হয় ৷ এর মধ্যে জোবায়েরের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাকে আটকে রাখে প্রক্টরিয়াল বডি।

চবি কর্তৃপক্ষের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে জোবায়েরের কাছে ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনের’ বিভিন্ন পরিকল্পনা পাওয়া যায়। সে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও স্বীকার করেছে।

আটকের পর চবি’র প্রক্টর অধ্যাপক রবিউল হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জোবায়েরর কাছে পাওয়া একটি ডায়েরিতে বিভিন্ন উসকানিমূলক কথাবার্তা পাওয়া গেছে। ক্যাম্পাস নিয়ে ‘রুখসাত’ পরিকল্পনার ছক পাওয়া গেছে। সেখানে শাটল ট্রেন এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির উপাদান মিলেছে। ওই শিক্ষার্থী ইসলামী ছাত্রশিবিরের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে স্বীকার করেছেন।

২৪ আগস্ট রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দফতরের প্রধান শেখ আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় জোবায়েরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটকের পর জোবায়েরের কাছে একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বা হামলা, ট্রেনচালককে জিম্মি করাসহ নাশকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির আরও বেশিকিছু তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া মোবাইলে বঙ্গবন্ধু, ১৫ আগস্ট ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিয়ে উসকানিমূলক বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। সে শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও কোন পদে আছে সেটা আমাদের বলেনি। নাশকতার পরিকল্পনার যেহেতু সুষ্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, আমরা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছিলাম।’

সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলার আসামিকে প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিফাত শারমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্নসময় এসে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে যায়। বিসিএস পরীক্ষা কিংবা সরকারি নিয়োগ সংক্রান্তসহ আরও বিভিন্ন কাজে তাদের প্রত্যয়ন পত্রের দরকার হয়। এটার একটা ফরম্যাট করা থাকে। যখনই কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করেন, একই ফরম্যাটে সবাইকে দেওয়া হয়। যে ছাত্র গ্রেফতার হয়েছে, তাকেও একইভাবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে সে মামলা থেকে জামিন পেতে ব্যবহার করতে এটা তো আমরা জানতাম না।’

তবে জোবায়েরকে দেওয়া এই প্রত্যয়নপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে বলে স্বীকার করেন অধ্যাপক সিফাত শারমিন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাকে (জোবায়ের) আটকের পর পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেখানেই নাশকতার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট উদ্ধার হয়েছে। এর পর প্রক্টরিয়াল বডির নির্দেশে নিরাপত্তা প্রধান মামলা করেছেন। তাকে ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও যেটা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব। এরপর বিষয়টি রেজিস্ট্রারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আইন বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাশকতাকারী প্রক্টরিয়াল বডি ভালো ছাত্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর