সুদীপ্ত হত্যা: আদালতে হাজির হয়েই জামিন পেলেন ছাত্রলীগ নেতা
৪ অক্টোবর ২০২২ ১৩:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস খুনের মামলার বিচার শুরুর আদেশের একদিন পর পলাতক এক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। এর ফলে মামলায় অভিযুক্ত ২৪ আসামিই এখন জামিনে আছেন।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকালে অভিযুক্ত আবু জিহাদ সিদ্দিকী চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আমিরুল ইসলামের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। দুই হাজার টাকার মুচলেকায় তাকে জামিন দেন আদালত।
আসামির আইনজীবী আবদুল্লাহ হাসান পিকু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবু জিহাদ আগেও জামিনে ছিলেন এবং নিয়মিত মামলায় হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। গতকাল (সোমবার) চার্জ গঠনের শুনানির দিনে তিনি অসুস্থতার জন্য হাজির হতে পারেননি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অভিযোগ গঠনের পর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর আজ (মঙ্গলবার) তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত দুই হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেছেন।’
নগরীর লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা আবু জিহাদ সিদ্দিকী (২৮) চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপ সম্পাদক। তিনি সুদীপ্ত হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এর আগে, গতকাল সোমবার ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস খুনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। গত ৩০ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশও দিয়েছেন আদালত।
অভিযোগপত্রভুক্ত ২৪ আসামির মধ্যে আবু জিহাদ সিদ্দিকী ছাড়া বাকি ২৩ আসামি অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় আদালতে হাজির ছিলেন। তারা সবাই জামিনে আছেন।
২৩ আসামি হলেন— দিদারুল আলম মাসুম (৪৮), মোক্তার হোসেন (২২), আমির হোসেন বাবু (২০), খাইরুল নুর ইসলাম খায়ের (২০), ফয়সাল আহমেদ পাপ্পু (২১), রুবেল কান্তি দে (২৭), সালাহউদ্দিন লাভলু প্রকাশ ডিস সালাহউদ্দিন (২১), রাজিবুল ইসলাম রাজিব (২৩), মামুনুর রহমান রাব্বি (২২), ইব্রাহিম খলিল বাবর (২২), আইনুল কাদের চৌধুরী নিপু (২৭), জাহিদুর রহমান জাহেদ (২৫), জিয়াউল হক ফয়সাল (৩০), নিজাম উদ্দিন রুবেল (২৫), মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন হানিফ ওরফে পিচ্চি হানিফ (৩৫), মিজানুর রহমান রাকিব (২৩), মো. শামীম (২৯), মোজাম্মেল হক মুরাদ (৩০), মো. মামুন (২৬), টিপু সুলতান (২৮), নিয়াজ মোর্শেদ নিপু (২৮), আমজাদ হোসেন (২৩) এবং আব্দুর রব নওশাদ (২৪)।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
সাড়ে তিন বছর তদন্তের পর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার অভিযোগপত্রে নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমকে সুদীপ্ত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আর কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন আইনাল কাদের নিপু। ফয়সাল আহমেদ পাপ্পুর আঘাতে সুদীপ্ত মারা যান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া আসামিরা সবাই দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। মিজানুর রহমান নামে এক আসামিও জবানবন্দিতে ‘বড় ভাই’ মাসুমের নির্দেশে খুনের কথা উল্লেখ করেন বলে গণমাধ্যমে তথ্য আসে।
আসামিদের মধ্যে দিদারুল আলম মাসুমসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদের মধ্যে চারজন আদালতে জবানবন্দি দেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস
ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস টপ নিউজ সুদীপ্ত বিশ্বাস সুদীপ্ত হত্যা