মোদির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি : কাদের
২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৫৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারত সফরে আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় সরকার প্রধান মোদির সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমি ওনাকে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে শুনিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি নির্বাচন সম্পর্কে মোদি সাহেবকে কথা বলতে শুনিনি। নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। কথা হয়েছে আমাদের উভয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে।
তিনি আরও বলেন, এই সম্পর্ক পার্টি টু পার্টি, সরকার গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট, পিপল টু পিপল এই কন্টাক্ট এবং রিলেশনশিপ। এটাকে কিভাবে আরও ইনহ্যান্স করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থে আরও বিগ ও স্ট্রংগার (শক্তিশ শালী) করতে হবে। সে ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হয়েছে।
কাদের আরও বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, এটা আমাদের বিষয়। এখানে ভারত কী করবে? ভারত কী আমাদের ক্ষমতায় বসাবে? অতীতে কী কখনো বসিয়েছে? ৭৫-এর পরবর্তী যে সংকট তখনও ভারত হস্তক্ষেপ করেনি।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারা তাদের গণতন্ত্রের যে বিউটি গড়ে তুলেছে তার অমার্যাদা করেনি- এটা আমরা এ পর্যন্ত দেখিনি, কখনো তারা তা করেছে।
আমাদের দেশে আগামীতে নির্বাচন হবে। ২০০১ সালে আমরা হেরে গেছি। ভারত কি আমাদের জেতাতে চেষ্টা করেছে। অনেকে অনেক কথা বলে, ভারতের সঙ্গে ন্যাচারাল অ্যালায়েন্স হয়। ভারত হস্তক্ষেপ করবে এটা কি আমরা চাই, না তারা এটা করেছে? যা সত্য নয় তা কেন বলবো?
এ বিষয়ে কাদের আরও বলেন, ইলেকশন হবে- কেউ কেউ হয়ত আশাবাদ করেছেন ডিনারে বসে। তারা বলেছে, আশা করছি- আপনারা আবার জিতবেন। এটা তো কার্টেসি। এটা তো করতেই হয়। আমরা একটি দলের হয়ে গেছি। এই কথা বলতেই পারে। এটা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি কোনো কথা বলেননি।
এ ব্যাপারে দলের কোনো নেতার নাম উল্লেখ না করে কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে অহেতুক এসব নিয়ে কথা বলার দরকার নাই বলে মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া ভারত সফর নিয়ে নেত্রী যে গাইডলাইন দিয়েছিল সেই অনুসারে আমরা কথা বলেছি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিস্তায় আমাদের বহু মানুষের লাইফ এন্ডেড হচ্ছে। উত্তর জনপদে পানির জন্য হাহাকার আছে। তিস্তা চুক্তি হলে বিষয়টি ইতিবাচক প্রক্রিয়া হবে। সেটা আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে পিপল টু পিপলকে শক্তিশালী করবে।
আমাদের জাতীয় স্বার্থে প্রতিবেশী সকল সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে বলেও জানান কাদের। এ ছাড়াও ভারত সফরে ভারতীয় জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদককে দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের কর্ণাটকে বিধানসভার নির্বাচন শেষে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, তারা এখন পাসপোর্ট নিয়ে সকালে এক কথা বিকেলে এক কথা বলে। আজ এক কথা, কাল এক কথা বলছে। মনে হয়, খাদের কিনারায় এসে বিএনপি এখন লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।
তারেক জিয়া পাসপোর্ট নিয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে, এতোদিন স্বীকার করেনি। এখন ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে। এরা আমাদের বলছে, আমরা মিথ্যাচার করছি। আসলে বিএনপি নামক দলটিতে কিছু পরিপূর্ণ মিথ্যাবাদী আছে। এটা তাদের স্বভাব। এখন হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। কোন পথ পাচ্ছে না।
এ ছাড়াও সম্পাদকমন্ডলীর সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা জাতীয় কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলে বৈঠক করে দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড গতিশীল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
আর গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেবলমাত্র ওই দুই সিটির অন্তভুক্ত সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরই কেবল নির্বাচনী প্রচার চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদদের মধ্যে মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরীরী নওফেল, আবদুস সোবহান গোলাপ, হাছান মাহমুদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, আফজাল হোসেন, অসীম কুমার উকিল, রোকেয়া সুলতানা, ফরদুরনাহার লাইলী, সুজিত রায় নন্দী, মৃণাল কান্তি দাস, আব্দুস সবুর, দেলোয়ার হোসেন, বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিরুল আলম মিলন, মারুফা আক্তার পপিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রোববার (২২ এপ্রিল) সকালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলটি ভারতে যায়। এর পর সফর শেষে ২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফেরেন প্রতিনিধিদলটি।
সারাবাংলা/এনআর/এমআইএস/এমআই