বসিলায় প্রতিমা বিসর্জনে হাজারও মানুষের ভীড়
৫ অক্টোবর ২০২২ ২২:১৩
ঢাকা: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজা উদযাপনের শেষ দিনে রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে যোগ দেন সনাতন ধর্মাবলস্বীসহ নানা ধর্ম, বর্ণের হাজারো মানুষ।
এ বছর দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি নাশ করে নৌকায় চেপে কৈলাসে স্বামীর ঘরে ফিরে গেলেন। আগামী বছরের শরতে আবার তিনি এই ধরণীতে ফিরে আসবেন।
বুধবার (৫ অক্টাবর) বিকেল ৪টা থেকে রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়।
তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে এদিন সেখানে ভিড় করেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। এ সময় সনাতন ধর্মের ভক্ত, অনুরাগীদের নেচে-গেয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে দেখা যায়।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে আসা অরিক চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকে মা চলে যাচ্ছেন, এজন্য খুব খারাপ লাগছে। তবে আগামী বছরটা সবার জন্য ভালো হোক আজকের দিনে এটাই চাই।’
রাখি নামের আরেক নারী বলেন, ‘আজ ভালো লাগছে, আবার খারাপও লাগছে। আগামী দিনগুলো যেন সবার জন্য ভালো হয় সে প্রত্যাশা করছি।’
শিপ্রা ঘোষ নামের আরেকজন বলেন, ‘মা কৈলাসে স্বামীর ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। এক বছর পর মা আবার ফিরে আসবেন। সেই প্রত্যাশায় থাকব। আর আগামী বছরটা যেন মঙ্গলময় হয় এটাই চাই।’
বুধবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
এদিন রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা সেতুন নিচে মোহাম্মপুর, রায়েরবাগ ও ধানমন্ডি এলাকার ডজন খানেক মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
আজ প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় ছিল। পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারি দেখা যায়। বুড়িগঙ্গা নদীতেও অস্ত্রধারী পুলিশের পাহারা পরিলক্ষিত হয়।
এদিন বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রথমে রায়েরবাগের আখরা মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর রায়েরবাগের দুর্গা মন্দির, ঋষিপাড়ার মন্দির, নিমতলীর শিব মন্দির, রায়েরবাগের কালী মন্দির, বসিলার বাঁশবাড়ি মন্দির, পুলপাড়ের কালী মন্দির, পুলপাড়ের ঋষিপাড়া মন্দির, নবাবগঞ্জের শিব মন্দির, হাজারীবাগের চাঁনপুর জেলা পাড়া মন্দিরসহ ধানমন্ডি এলাকার কয়েকটি মন্দিরের প্রতিমা সেখানে বিসর্জন দেওয়া হয়।
আজ সেখানে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে যে জায়টায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে সেটা ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা। তবে এখানে বিসর্জন দিতে আসা বেশিরভাগ প্রতিমা আমার এলাকার (৩৪ নম্বর ওয়ার্ড) মণ্ডবের। আমার এলাকায় এবারের পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। পূজার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ এলাকার লোকজন, স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছে। যার ফলে এ বছরের পূজা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাপ্ত হয়েছে।’
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে দায়িত্বরত ধানমন্ডি এলাকার পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মুজিব আহমেদ পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর এলাকা ছাড়াও আরও কয়েকটি এলাকার মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ জন্য পুলিশ, র্যাব আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এখানে নানা ধর্মের হাজারো উপস্থিত হয়ে মানুষ প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান দেখেছে।’
গত ১ অক্টোবর চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী পাঁচদিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
এ বছর দেবী দুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে ঝড়, বৃষ্টি হবে এবং শস্য ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে নৌকায় চড়ে স্বর্গে ফিরে যান। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে