বুয়েটে আবরারের নামে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের দাবি বাবা-মায়ের
৬ অক্টোবর ২০২২ ১১:৪০
ঢাকা: তিন বছর হয়ে গেছে আবরার খুন হওয়ার। এভাবে বছরের পর বছর চলে যাবে। এক সময় আবরারকে সবাই ভুলে যাবে। পরবর্তী প্রজন্ম যেন জানতে পারে, মনে প্রশ্ন জাগে কে এই আবরার। এজন্য আবরারের নামে বুয়েট ক্যাম্পাসে একটা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করার দাবি জানালেন মা রোকেয়া খাতুন।
নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আবরারকে নিয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে চেয়েছিল। আশা করছি, তারা কালক্ষেপন না করে সেটার কাজ দ্রুত শুরু করবেন।’
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
নিহত আবরারের মা রোকেয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তিন বছর আগে এই দিনে (৫ অক্টোবর সন্ধ্যায়) আবরার আমার কাছে ছিল। তাকে নাস্তা দিচ্ছিলাম। বলে- আম্মু তুমি নাস্তা রেডি কর, আমি ৫ মিনিট পর আসতেছি। এরপর যদিও ফিরে এসেছিল। কিন্তু ঢাকা যাওয়ার পর তিন বছরেও আর ফিরল না। আবরার আর বলবে না, আম্মু আসি। ছোট ছেলে ফাইয়াজের সব দায়িত্ব ছিল আবরারের ওপর। ফাইয়াজ বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। এখন ওকে কে দেখছে। কে ওকে গাইড লাইন দেবে। ফাইয়াজকে তাই বলি, বাবা আল্লাহ ছাড়া তোমার কেউ নাই। তুমি মানুষের মতো মানুষ হও।’
তিনি বলেন, ‘আবরারকেও ভর্তির আগে একথা বলেছিলাম। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেই তো আর মানুষ হয় না। বেঁচে থাকলে আবরার বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হতো। কিন্তু তা তো আর হলো না। তাকে তো আর ফিরে পেলাম না। আর ফিরে আসবেও না। আর কতদিন এ কষ্ট বুকে চেপে রাখব। ফাইয়াজকে মানুষ করার জন্য বেঁচে থাকতে হয়।’ সন্তানের হত্যাকরীদের সাজা যেন বহাল থাকে এবং দ্রুত তা কার্যকর করা হয় সেই প্রত্যাশায় তিনি করেন।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘নিম্ম আদালত থেকে যে রায় পেয়েছি তাতে আমরা সন্তুষ্ঠ। আশা করব, উচ্চ আদালতেও যেন আসামিদের এ সাজা বহাল থাকে। রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়।’
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। পরের বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার অরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন অরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান অরফে মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান অরফে মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম অরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত অরফে এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান অরফে মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ অরফে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম (২০), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২) এবং মুজতবা রাফিদ (২১)। এর মধ্যে তানিম, প্রকাশ জিসান ও রাফিদ পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩), ও মো. মোয়াজ অরফে মোয়াজ আবু হুরায়রা (২১)।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার যাবতীয় কাগজপত্র মূল নথিসহ ৬৬২৭ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জানুয়ারি বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ের কপি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
সারাবাংলা/এআই/এনএস