মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে
৬ অক্টোবর ২০২২ ১৩:৩৫
ঢাকা: ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত (১২টা ১ মিনিট) থেকে অর্থ্যৎ ৭ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় সম্পৃন্ন নিষিদ্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে ইলিশ ধরা হয় এমন ২০ জেলায় বরফকলগুলো বন্ধ থাকরে।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকালে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদ মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক উপস্থিত ছিলেন।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘চলতি বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের উপলক্ষ্য ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ২০ জেলার নদ-নদী ও মোহনায় ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয়- বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি এসব জেলার বরফকলগুলো বন্ধ থাকবে। জেলাগুলো হলো- চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুণা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, ঢাকা, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ।’
তিনি বলেন, ‘এই সময় অপর ১৮টি জেলা কেবল ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। সে জেলাগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল এবং জামালপুর। এ সময় দেশের ৩৮ জেলার সকল নদ-নদী ও মোহনায় মা ইলিশ আহরণ বন্ধে দিনে ও রাতে অভিযান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং সারাদেশের মাছ ঘাট, মৎস্য আড়ৎ, হাট-বাজার, চেইনশপ ও অন্যান্য বিক্রয়কেন্দ্রে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় বন্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিফতর সম্মিলিতভাবে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করবে। প্রজনন মৌসুমে অবৈধভাবে ইলিশ আহরণকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে উপকূলীয় নদী ও মোহনায় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে আকাশপথে অভিযান (এয়ার সার্ভিল্যান্স) পরিচালনা করা হবে।’
এ বছর জেলেদের জন্য ভিজিএফ-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে পরিবার প্রতি ২০ কেজি হতে ২৫ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে। এর আওতায় দেশের ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ ইলিশ। এটি আমাদের জাতীয় মাছ। এ মাছ দেশের মানুষের খাদ্য ও নিরাপদ আমিষের যোগানের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রফতানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাখছে। দেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপি-তে এর অবদান শতকরা ১ ভাগের বেশি। বাংলাদেশের ইলিশ ইতোমধ্যে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার সমন্বিতভাবে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের গৃহিত ব্যবস্থাপনায় তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ।’
সারাবাংলা/জিএস/ইআ