Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চীনের ক্ষমতার লড়াই: অর্ধশতাব্দী আগের মতোই ভয়ংকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৮ অক্টোবর ২০২২ ১৩:০৮

অর্ধশতাব্দী আগে চীন-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন দুই দেশের শীর্ষ নেতারা। এ প্রক্রিয়ায় জড়িত রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের জন্য পদক্ষেপটি ছিল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কারো কারো জন্য শুধু ক্যারিয়ারেরই ঝুঁকি নয়, জীবনও ছিল ঝুঁকিতে।

১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে চীন সফর করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুয়েই তানাকা। বেইজিংয়ে তিনি চীনের চেয়ারম্যান মাও সেতুং এবং প্রিমিয়ার চৌ  এনলাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। নেতৃবৃন্দের ম্যারাথন আলোচনার পর ২৯ সেপ্টেম্বর কাকুয়েই তানাকা এবং চৌ এনলাই একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। এতে দীর্ঘ বৈরিতার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কাগজে-কলমে স্বাভাবিক হয়।

বিজ্ঞাপন

জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তানাকার নির্বাহী সচিব ছিলেন আকিতানে কিউচি। এখন তার বয়স ৯৫ বছর। তিনি সেসময় তানাকার সঙ্গে চীন সফর করেছিলেন। আকিতানে কিউচি সেসময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে চলা ভয়ংকর ক্ষমতার লড়াইয়ের কিছু নমুনা প্রত্যক্ষ করেছেন।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর চীন-জাপান সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী স্মরণে টোকিওতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ভাষণ দেন কিউচি। তার ভাষণে চীনের ভয়ংকর রাজনৈতিক খেলার বর্ণনা দিয়েছেন কিউচি।

তিনি বলেন, “আলোচনা সফলভাবে শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তানাকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাপানে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কারণে চীনের প্রিমিয়ার চৌ এনলাই বললেন, ‘জাপানে ফেরার আগে আপনার একবার সাংহাইয়ে যাওয়া উচিত। সেখানে যাওয়া আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তাই আমরা জাপানে ফেরার আগে সাংহাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

কিউচি বলেন, “পরে আমরা জানতে পারলাম, সাংহাই মূলত চিয়াং চুনকিয়াও এবং ইয়া ওয়েন ইউয়ানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল। এই দুই ব্যক্তি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কথিত গ্যাং অব ফোরের সদস্য।” উল্লেখ্য, গ্যাং অব ফোর নামে চার শীর্ষ নেতার একটি চক্র ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ১০ বছর চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এই গ্রুপের শীর্ষে ছিলেন মাও সেতুং-এর স্ত্রী চিয়াং চিং।

বিজ্ঞাপন

সেসময় চীন সফর শেষে ফ্রান্সে জাপানের রাষ্ট্রদূত হওয়া কিউচি টোকিওতে দেওয়া ওই ভাষণে বলেন, “চীনের প্রিমিয়ার চৌ এনলাইয়ের সঙ্গে গ্যাং অব ফোরের সম্পর্ক ভালো ছিল না। তারা জাপানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণেরও সমর্থক ছিল না। জাপানের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন যে কতটা জরুরি তা গ্যাং অব ফোরকে বুঝানোর মরিয়া তাগিদ ছিল চৌ এনলাইয়ের মধ্যে।”


ছবির ডানদিক থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুয়েই তানাকা এবং চীনের চেয়ারম্যান মাও সেতুং করমর্দন করছেন। পাশে চীনের প্রিমিয়ার চৌ এনলাই। ঐতিহাসিক বৈঠকটি ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়।

চৌ এনলাইয়ের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী তানাকা সাংহাইয়ে যেতে রাজি হন। চীনের প্রিমিয়ারের নিজস্ব বিমানে করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা সাংহাই যান। তানাকা এবং চৌ সাংহাই বিমানবন্দরে গ্যাং অব ফোরের সদস্য এবং শহরের বিপ্লবী কমিটির চেয়ারম্যান চিয়াং চুনকিয়াওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চৌ এনলাই ব্যক্তিগতভাবে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য চিয়াং চুনকিওয়ার সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণের ইস্যুতে তার রাজনৈতিক শত্রুদের সমর্থন আদায়ে সফল হন চৌ এনলাই।

২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সাংহাইয়ের বিপ্লবী কমিটি একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের হোস্টদের খুশি করতে তাদের প্রতিটি টোস্টেই মধ্যপান করেছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা। এতে তিনি এতটাই মাতাল হয়ে গিয়েছিলেন যে, চৌ এনলাইর কাঁধে ভর দিয়ে তাকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে হয়েছিল।

সেদিন তানাকা যদি সাংহাই সফর না করতেন, তাহলে গ্যাং অব ফোর চীন-জাপান সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে দিত না। তারা নতুন এই সমঝোতা বানচালের জন্য সব ধরনের বাধা সৃষ্টি করত। তাদের বাধায় দুই দেশের সম্পর্ক অন্য কোনো ধারায় চলে যেত।

এ ঘটনার চার বছর পর ১৯৭৬ সালে মাও সেতুং মারা যান। তার পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গ্যাং অব ফোর দ্রুত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। গ্যাং অব ফোরের সদস্যরা গ্রেফতার হন। বিচারে মাওয়ের স্ত্রী চিয়াংকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তা কমিয়ে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।


গ্যাং অব ফোরের চার সদস্য। বা থেকে চিয়াং কিং, চেং চুনকিয়াও, ইয়া ওয়েন ইউয়ান, ওয়াং হং

চীনে ক্ষমতার লড়াই ভয়ংকর ও অনিশ্চিত— কেউ জানে না কার ভবিষ্যতে কী আছে। পর্দার আড়ালে চলে মারাত্মক সব রাজনীতি। সেসময় মে মাসের মাঝামাঝি, অর্থাৎ তানাকার চীন সফরের চার মাস আগে চিকিৎসকরা জানতে পারেন প্রিমিয়ার চৌ এনলাই মূত্রাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত। তবে এ খবর তখন চৌ নিজেই জানতেন না, অর্থাৎ তাকে জানানো হয়নি।

চৌ এনলাই ক্যানসার আক্রান্তের খবর সবার আগে জেনেছিলেন মাও সেতুং। চীনে কোনো নেতার ক্যানসারের মতো চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের জন্য মাও সেতুংয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হতো। ‘চৌ এনলাই: দ্য লাস্ট পারফেক্ট রেভ্যুলোশনারি’ নামক বইয়ে লেখক গাও ওয়েনকিয়ান জানিয়েছেন, সে সময় চিকিৎসকদের প্রতি মাও সেতুংয়ের আদেশ ছিল, চৌ এনলাইকে তার ক্যানসারের খবর জানানো যাবে না।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শুরুর দিকে চৌ এনলাই ছিলেন মাও সেতুংয়ের উপরস্থ নেতা। চৌ এনলাই অবশ্য বয়সের দিক থেকে মাও সেতুংয়ের ৫ বছরের ছোট। পরে মাও সেতুং চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে চৌ এনলাইকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ নেতায় পরিণত হন।

চৌ এনলাইয়ের সক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে মাও সেতুং বরাবরই চিন্তিত ছিলেন। সেসময় মাওয়ের নিজের মনোনীত উত্তরসূরি লিন বিয়াওয়ের মৃত্যুর পর চৌ এনলাই পার্টির দুই নম্বর নেতায় পরিণত হন। মাও আশঙ্কা করেছিলেন, চৌ যদি তার চেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকেন তাহলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলাফল বিপরীত হতে পারে।

১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ের পার্শ্ববর্তী চিংনানহাই নামক এলাকায় মাও সেতুং তার অফিসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকে চৌ এনলাইও উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয়, চৌ এনলাই তার শরীরে যে ক্যানসার বেড়ে উঠছে তা সেসময় জানতেন না। তিনি যদি তখন চিকিৎসা নিতেন হয়ত আরও দীর্ঘদিন বাঁচতেন। পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে মাও সেতুং মারা যাওয়ার আট মাস আগে মারা গিয়েছিলেন চৌ এনলাই।

সেসময় চীন ভ্রমণ করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা তার জীবন বাজিতে রেখেছিলেন। তানাকার মেয়ে জাপানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাকিকো তানাকাও টোকিওতে চীনা দূতাবাসে ৫০তম বার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে একজন বক্তা ছিলেন। মাকিকো তানাকা স্মৃতিচারণ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তানাকা বেইজিং থেকে ফিরে তাকে বলেন, ‘আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি, আমাকে হয়ত বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হতে পারে।’ তানাকা সাধারণত তার মেয়ে মাকিকোকে বিদেশ সফরে সঙ্গী করতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ঝুঁকির কারণে চীন সফরে মাকিকোকে নিয়ে যাননি তিনি।

অর্ধ শতাব্দী আগে চীন-জাপান সম্পর্কের এই গোপন ইতিহাস চীনের ক্ষমতার লড়াইয়ের তিনটি কাঠামোগত দিক তুলে ধরেছে— যা এখনও অপরিবর্তিত।

প্রথম দিকটি হলো— গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্তগুলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীন ক্ষমতার লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

দ্বিতীয় দিক হলো— সাংহাই বরাবরই দলীয় কোন্দলের কেন্দ্র। সাংহাইয়ের নেতারা লড়াইয়ে পরাজিত হলে তাদের নির্দয়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তৃতীয়— চীনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী নেতারাও সবসময় তাদের ডেপুটিদের সন্দেহে রাখেন।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পার্টির পঞ্চবার্ষিকী জাতীয় কংগ্রেসে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। উপরে বর্ণিত এই তিনটি বিষয় আজকের দিনে জাতীয় কংগ্রেসে ঠিক ততটাই প্রাসঙ্গিক, যতটা ১৯৭২ সালে ছিল।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৭২ সালের পরবর্তী বছরগুলোতেও চীন-জাপান সম্পর্ক চীনের ক্ষমতার লড়াইয়ে একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

১৯৮৫ সালে আরেক জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে টোকিওতে অবস্থিত বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন। ওই মন্দিরটি মূলত চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জাপানি শহিদদের সমাধি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই মন্দির আগেও গিয়েছিলেন, কিন্তু ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্টের ভ্রমণ ছিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি যেদিন মন্দির পরিদর্শনে যান সেইদিনটি ছিল চীন-জাপানের যুদ্ধ শেষ হওয়ার তারিখ অর্থাৎ, ১৫ আগস্ট। টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্দির পরিদর্শনের প্রভাব গিয়ে পড়ে চীনের রাজনীতিতে। সেসময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হু ইয়াওব্যাং। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। যার ফলে হু ইয়াওব্যাংকে তখন পার্টি সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ জাতীয়করণের প্রতিক্রিয়ায় চীনে জাপানবিরোধী বিক্ষোভ দেখা যায়। জাপান সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত এমন এক সময় নিয়েছিল, যখন চীনে ক্ষমতার অদলবদল চলছিল। সেসময় হু জিনতাওয়ের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শি জিনপিং। এতে বেইজিং ছিল নেতৃত্বশূন্য। শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য ঝু ইয়ংকাং সেসময় দেশের পুলিশ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। মূলত তিনি রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট এসব বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন। সেসময় তিনি হেবেই প্রদেশের গুয়ানসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ এলাকা থেকে দৈনিক মজুরি ও দুপুরের খাবারের বিনিময়ে বেইজিংয়ের রাস্তায় লোক জড়ো করেছিলেন।

সাংহাই আগের মতোই চীনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে এখনও রয়ে গেছে। জাতীয় কংগ্রেসে মূলত পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটি রদবদল করা হয়। এবার অনেকেই দেখার অপেক্ষায় আছেন যে, শি জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠ সাংহাইয়ে শীর্ষ নেতা লি চিয়াংকে ৭ জনের স্থায়ী কমিটিতে ঢুকানো হয় কি না।


সাংহাইয়ে পার্টির শীর্ষ নেতা লি চিয়াং

চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট চিয়াং জেমিনের নেতৃত্বে এখনও চীনের রাজনৈতিক বৃত্তে সাংহাই গ্রুপের বিশাল প্রভাব রয়ে গেছে। লি চিয়াংকে বর্তমান প্রিমিয়ার লি কেকিংয়ের উত্তরাধিকারী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে অগ্রণী হিসেবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময় লকডাউন পরিস্থিতিতে সাংহাইয়ে চরম বিশৃঙ্খলা হয়। চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা সূচনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে সাংহাইয়ের এই অব্যবস্থাপনাকে। এ কারণে প্রিমিয়ার হওয়ার দৌড়ে লি চিয়াং অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। তবে পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি হতেই পারেন।

আরও পড়ুন- চীনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় হু চুনহুয়া

শি জিনপিং এবং প্রিমিয়ার লি কেকিয়াংয়ের মধ্যে আগে থেকেই একটি রাজনৈতিক টানাপড়েন রয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের এক নম্বর উত্তরসূরি হিসেবে মনে করা হতো লি কেকিয়াংকে। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসে যখন পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটি প্রকাশ হয়—তখন দেখা যায় শি জিনপিং স্থায়ী কমিটির ৬ নম্বর নেতা এবং লি কেকিয়াংয়ের নম্বর ৭। অর্থাৎ, পরবর্তী নেতৃত্বের দৌড়ে লি কেকিয়াংকে পেছনে ফেলে শি জিনপিং সামনে চলে যান। লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে ক্ষমতার এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৫ বছর ধরে নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন শি জিনপিং।

ইতোমধ্যে ২০২৩ সালে প্রিমিয়ার পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে লি কেকিয়াং। তবে চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় ‘সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ’ নীতি বজায় রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন লি কেকিয়াং। গত আগস্টের মাঝামাঝি চীনের হেবেই প্রদেশের বার্ষিক ‘গ্রীষ্মকালীন শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। বেইদাইহে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পরপরই প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং প্রকাশ্যে রহস্য করে বলেছিলেন, “ইয়োলো রিভার এবং ইয়াংজি রিভার কখনও উল্টো দিকে প্রবাহিত হবে না।” তার এই কথার অর্থ কী, তা অবশ্য তিনি ব্যাখ্যা করেননি।


চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রিমিয়ার লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ

চীনে লি কেকিয়াং বরাবরই জনপ্রিয়। তাকে ঘাটাতে হয় খুব সাবধানতার সঙ্গে। আসন্ন কংগ্রেসে লি কেকিয়াংকে কিভাবে সামলাবেন শি জিনপিং—এই প্রশ্নের জবাব গুরুত্বপূর্ণ।  শি জিনপিং কংগ্রেসে লি কেকিয়াংকে চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার দিকে ঠেলে দিয়ে সাইডলাইনে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। ক্ষমতার স্থিতিশীলতার জন্য শি এই কাজটি করার চেষ্টা করতেই পারেন। এছাড়া লি কেকিয়াংকে অবসরে যেতেও বাধ্য করতে পারেন শি জিনপিং। এটিও বিচিত্র নয় যে, লি কেকিয়াংকে পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ দিতে পারেন শি জিনপিং। লি কেকিয়াং এবং আরও কয়েকজন ষাটোর্ধ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে যদি অবসর নেন তাহলেই কেবল শি জিনপিং সর্বোচ্চ এই ফোরামে তার ঘনিষ্ঠদের ঢুকাতে পারবেন।

স্থায়ী কমিটিতে ঢুকানোর মতো শি জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে থাকতে পারেন চেন মিনার, ডিং জেয়েশিয়াং এবং লি চিয়াং। এদের মধ্যে চেন হলেন চংকিং অঞ্চলের শীর্ষ নেতা, এবং ডিং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ের পরিচালক।

শি জিনপিং ইতোমধ্যে তার নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে যথেষ্ট পরিবর্তন এনেছেন। এবার দেখার বিষয় হলো তিনি দুই লি’কে কিভাবে সামলান। শি জিনপিংকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগামী সম্মেলনে লি কেকিয়াং এবং লি চিয়াংয়ের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করবেন তিনি।

– নিক্কেই এশিয়ার সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট কাতসুজি নাকাজাওয়ার প্রতিবেদন। ভাষান্তর- আতিকুল ইসলাম ইমন

সারাবাংলা/আইই

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চৌ এনলাই মাও সেতুং শি জিনপিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর