বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা, ৩ কোটি টাকাসহ ৫২১টি পাসপোর্ট উদ্ধার
৭ অক্টোবর ২০২২ ১৬:০১
ঢাকা: রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে বিদেশে পাঠানোর নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া মানবপাচারকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা ও তার প্রধান সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় একটি মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ, দরিদ্র বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বশান্ত করছে। এমনকি যাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে তারাও প্রবাসে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অনেক ভিকটিমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ তাদের গ্রেফতার করেছে।’
গ্রেফতার মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসানের (৫০) বাড়ি সিরাজগঞ্জ ও মাহমুদ করিমের (৩৬) বাড়ি রাজশাহীতে। এসময় আসামিদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি করা ভুয়া কোর্সের সনদ ৬৫টি, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টি, ভুয়া কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ২২৫টি, সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা এবং কম্বোডিয়ায় চাকরির ভুয়া চুক্তিপত্র, টাকা গ্রহণ রেজিস্টার ৩টি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ১৫টি, রোমানিয়ান জাল ভিসা ৭টি, জাল কাগজপত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত মনিটর, সিপিইউ, কি-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার এবং প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।’
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিভিন্ন অসহায় দরিদ্রদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান এবং তার প্রধান সহযোগী মাহমুদ করিম। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গমনে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে।
এর মধ্যে যারা মধ্যেপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা করে জমা নেয়। বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ নিজস্ব কম্পিউটারে তৈরি করা বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তাদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়। পরবর্তীতে তারা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং কোনো কার্যক্রম না দেখে বার বার তাকে টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো ভিকটিমকে টাকা ফেরত দেয়নি।
গত দুই বছরে পাসপোর্ট এবং অর্থ জমাদানকারী কোনো ভিকটিমকে তারা বিদেশে পাঠাতে পারেনি। উপরন্তু সে নিয়মিতভাবে তার দেশীয় দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার আরও অনেক লোকজনের কাছ থেকে বিদেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা সব অর্থসহ সে এবং তার সহযোগী দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, বিদেশে পাঠানোর কোন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে তারা সংগ্রহ করা কোনো পাসপোর্ট জমা দেয়নি এবং অর্থ জমাদানকারীদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কোনো কার্যক্রম চালায়নি। তারা ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য হিসেবে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠায়।
প্রথমে তারা পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। বিদেশে যাওয়ার পর বিদেশে অবস্থানরত এজেন্ট দ্বারা তাদের ফের প্রতারিত করা হয়। কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দি করে রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময়ে ভিকটিমদের কোনো খাবার দেওয়া হয় না। এসময় ভিকটিমরা মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ভিকটিমদের অপেক্ষা করতে বলে। সে জানায়, কিছুদিন পর কোম্পানি চালু হবে। তখন তারা বেতন ও কাজের সুযোগ পাবেন।
অনেক সময় ভিকটিমরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজেদের চেষ্টায় টিকেট জোগাড় করে দেশে ফেরার চেষ্টা করেন। এরপর ভিকটিম দেশে ফিরে এলে মাহবুব অভিভাবক এবং ভিকটিমদের উল্টো দোষারোপ করে। সে দাবি করে, ভিকটিম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে কাজের সুযোগ পেত।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও