কাউন্সিলর ‘শৈবালকাণ্ডে’ দুঃখ প্রকাশ করতে হলো মেয়র রেজাউলকে
৭ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ফেসবুকে লাইভে এসে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সব ধরনের ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগের ক্যাবল কেটে ফেলা নিয়ে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের ‘খামখেয়ালি’ কর্মকাণ্ড দুঃখ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র ক্ষতিগ্রস্ত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ক্যাবল অপারেটরদের পাশাপাশি গ্রাহকদের ভোগান্তির জন্যও দুঃখ প্রকাশ করেন।
নগরীর ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আকস্মিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় নগরজুড়ে দিনভর ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাতে ক্যাবল অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএ) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মেয়র রেজাউল। নগরীর বহদ্দারহাটে মেয়রের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ক্যাবল অপারেটর চট্টগ্রাম কমিউনিকেশনস লিমিটেডের (সিসিএল) পরিচালক শ্যামল কুমার পালিত মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে কাউন্সিলর ক্যাবল কেটে ফেলেন। এর ফলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটি তিনি একবারও ভাবেননি। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ব্যাংকে গ্রাহকদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতেও কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে চলতে পারেনি।’
আরও পড়ুন: কাউন্সিলর ‘শৈবালকাণ্ডে’ বন্ধ ইন্টারনেট-স্যাটেলাইট সম্প্রচার
‘ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় শহরের জামালখান, রহমতগঞ্জ, দেওয়ানবাজার, কাপাসগোলা, চকবাজার, শুলকবহর, বাদুরতলা, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, মোহরা, কালুরঘাট হয়ে বোয়ালখালী উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের টেকনিশিয়ানরা ক্যাবল পুনঃসংযোগ দিতে গেলে কাউন্সিলরের লোকজন তাদের বাধা দেয়। তখন আমরা ঘোষণা দিই যে, পুরো চট্টগ্রামে আমরা সম্প্রচার বন্ধ করে দেব’— বলেন শ্যামল কুমার পালিত
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের ক্যাবল বিচ্ছিন্ন করাকে ‘নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের’ সঙ্গে তুলনা করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ক্যাবল কাটার বিষয়টি আমি জানতাম না। এটি সিটি করপোরেশনের বা মেয়রের কোনো সিদ্ধান্তে কাটা হয়নি। আমি যদি জানতাম, তাহলে আগে আপনাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করতাম। সম্মিলিতভাবে কাজটা করতাম। বিউটিফিকেশনের জন্য তারের জঞ্জাল সরানোর দরকার আছে, কিন্তু এটা তো হুট করে হবে না। এখন ডিজিটাল যুগ। এক মুহুর্ত ইন্টারনেট ছাড়া থাকতে হলে কী ভোগান্তি হয়, সেটি আমি বুঝি।’
এরপর মেয়র সার্বিক কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, গ্রাহকদের ভোগান্তি হয়েছে, এটা তো আমি আর ফেরত দিতে পারব না। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি আপনাদের কাছে, গ্রাহকদের কাছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম আর হবে না, এটি আশ্বস্ত করছি। কোনো সিদ্ধান্ত যদি নিতে হয়, আমি আপনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নেব। আপনাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্যাবলগুলো পুনরায় মেরামত করে ইন্টারনেট সার্ভিস ও চ্যানেলের সম্প্রচার আবারও শুরু করার জন্য আমি অনুরোধ করছি।’
রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়রের সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পর নগরীর জামালখানসহ আশপাশের এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ আংশিক চালু হয়। শুক্রবার দুপুর থেকে পুরোদমে চালু হওয়ার তথ্য দিয়েছে আইএসপিএ। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার পুরোপুরি চালু করা যায়নি।
জানতে চাইলে শ্যামল কুমার পালিত বলেন, ‘মেয়র মহোদয়ের দুঃখ প্রকাশের প্রেক্ষিতে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। যেভাবে ক্যাবলগুলো কাটা হয়েছে, একেবারে মেইন লাইন কেটে ফেলা হয়েছে, এগুলো পুনঃমেরামত করা সময়সাপেক্ষ। সারারাত আমাদের টেকনিশিয়ানরা কাজ করেছে। আজ (শুক্রবার) দুপুরের মধ্যে কয়েকটি এলাকায় আমরা সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে পেরেছি। আশা করছি, রাতের মধ্যে পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে।’
সূত্রমতে, বৈঠক চলাকালীন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে ফোন করে সেখানে যেতে বলেন। তবে বৈঠক শেষ হওয়া অব্দি তিনি সেখানে যাননি। বৈঠক শেষে ক্যাবল অপারেটর ও আইএসপি প্রতিনিধিরা বেরিয়ে গেলে কাউন্সিলর সুমন মেয়রের বাসায় ঢোকেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে ফেসবুক লাইভে এসে ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগের ক্যাবল কাটা শুরু করেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। সিটি করপোরেশনের বৈদ্যুতিক বাতি সংযোগের কাজে ব্যবহৃত বিশেষ গাড়ি এবং কর্মীদের তিনি এই কাজে ব্যবহার করেন। নগরীর চেরাগি পাহাড় থেকে জামালখান লিচুবাগান পর্যন্ত এলাকায় আধা ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সড়কের দু’পাশের ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগের সব ক্যাবল কেটে দেয়া হয়। পরবর্তীতে খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মোড় পর্যন্ত সব ধরনের ক্যাবল কেটে ফেলা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট সংযোগ ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার মুখে হঠাৎ ঘটনাস্থল থেকে সরে যান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
অভিযোগ ওঠে, ফেসবুকে প্রচার পাওয়ার আশায় কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বে-আইনিভাবে ক্যাবলগুলো কেটেছেন। তবে ঘটনাস্থলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সুমন এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তারের জঞ্জালের জন্য জামালখান এলাকায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এজন্য পূর্বঘোষণা দিয়ে ইন্টারনেট ও ডিসের ক্যাবল বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিয়মিত ফেসবুকে লাইভে এসে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনেরই আলোচনা আছে। তবে এবার ক্যাবল বিচ্ছিন্ন করার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বিতর্কের মুখে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউন্সিলরের তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।
সারাবাংলা/আরডি/একে