সংস্কার করা হবে জাতীয় সংসদ ভবন, বাড়ানো হবে নিরাপত্তা
৮ অক্টোবর ২০২২ ১০:১৯
ঢাকা: জাতীয় সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম করা হবে। এজন্য ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ১৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় সংসদ ভবনের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৯ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের অনন্য স্থাপত্য সৃষ্টি এবং দেশের প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই ভবনে সংসদ প্লেনারি হলসহ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ ভিআইপিদের অফিস রয়েছে। ভবনটি প্রায় ৪৫ বৎসর আগে নির্মিত। জাতীয় সংসদ ভবন এবং এর সঙ্গে সব স্থাপনা লুই আই কানের স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী গণপূর্ত অধিদফতর নির্মাণ করছে এবং গণপূর্ত অধিদফতর ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণও করছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আর্কাইভ স্থাপন করা বিশেষ প্রয়োজন। সে কারণে জাতীয় সংসদ পরামর্শ ও স্থাপত্য অধিদফতর প্রদর্শিত স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আর্কইভ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং ভিভিআইপি ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার ছাদের উপরে রেড ব্রিকের স্থায়িত্ব নষ্ট হওয়ার ফলে ব্রিক সারফেস এবং ছাদের উপরিতলের সিরামিক ব্রিক জয়েন্টের কার্যকারিতা কমে গেছে। জাতীয় সংসদ ভবনের ওয়ার্কওয়েগুলো (ফুটপাথ) নষ্ট হয়ে গেছে।
এজন্য জাতীয় সংস্দ থেকে একটি এবং গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটেই ছাদের এবং পেভমেন্টের পুরাতন ইট পরিবর্তনের পক্ষে মতামত দেন।
ফলে বঙ্গবন্ধু আর্কাইভ স্থাপন, পুরাতন ইটগুলো পরিবর্তন, জাতীয় সংসদের সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস অফিসের চাহিদা মোতাবেক আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা হবে। পাশাপাশি আনুষঙ্গিক বৈদ্যুতিক লোড বৃদ্ধির কারণে নরমাল এবং ইমারজেন্সি সাব-মেইন ক্যাবলের আধুনিকায়ন, জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় অবস্থিত ৪টি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের জন্য এলটি সুইচ গিয়ার ও বাসবার ট্রাংকিং স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক বৈদ্যুতিক কাজ, ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিভিন্ন সভা কক্ষের সৌন্দর্যবর্ধন এবং মন্ত্রী হোস্টেল ব্লকে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টুডিও নির্মাণ করা হবে।
পাশাপাশি মন্ত্রী হোস্টেল এলাকায় জরাজীর্ণ পুলিশ ব্যারাকটি পুনর্নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, জাতীয় সংসদ ভবনে বঙ্গবন্ধু আর্কাইভ নির্মাণ, ক্যাবিনেট কক্ষ, স্থায়ী কমিটি কক্ষ-১, ২ ও ৩ এবং শপথ কক্ষের আধুনিকায়ন কাজ। ৫৮ হাজার ১৭৩.৯১ বর্গমিটার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার সব ওয়ার্কওয়ের নষ্ট হয়ে যাওয়া ইট পরিবর্তন কাজসহ ফেয়ার ফেস দেয়ালে ও সিরামিক ব্রিক সার্ফেসে ওয়াটার রিপিলেন্ট প্রয়োগ কাজ করা হবে।
এছাড়া ২৩৫.৪১ বর্গমিটার জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রী হোস্টেল ব্লকে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টুডিও নির্মাণ ও আধুনিকায়নের কাজ হবে। এক হাজার ৩৬১.৫৮ বর্গমিটার জাতীয় সংসদ ভবনের হোস্টেল এলাকায় ব্যারাক পুনর্নির্মাণ কাজ। ৩টি জাতীয় সংসদ এবং সংসদ সদস্য ভবন নং-২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ এর বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ও নিরাপত্তাজনিত কাজ। আরবরিকালচার ও পূর্ত কাজের জন্য যন্ত্রাপাতি কেনা হবে।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ভবনের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও