দল-নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে ডিসি-এসপিদের প্রতি সিইসির আহ্বান
৮ অক্টোবর ২০২২ ১৫:০১
ঢাকা: জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলছেন, ‘আপনারা সরকারের অবাধ্য হবেন না। কিন্তু সরকার ও দলের মধ্যে প্রভেদ বিবেচনায় রেখে দল-নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
শনিবার (৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ৪ নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ডিসি-এসপি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এতে সভাপতিত্ব করেন।
সিইসি বলেন, ‘আমাদের (ইসি) ও আপনাদের (ডিসি-এসপি) উপর অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতা জনগণের আমানত। আপনারা কেবল সরকারি কর্মচারী নন, গণকর্মচারীও। আমরা সরকারি কর্মচারী নই, কিন্তু গণকর্মচারী। আপনারা সরকারের অবাধ্য হবেন না। কিন্তু, সরকার ও দলের মধ্যে প্রভেদ বিবেচনায় রেখে দল-নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দলীয় সরকারের অধীন মনে করে নিজেদের দলীয় কর্মী বা সমর্থক ভাববেন না বা এমনভাবে আচরণ করবেন না যাতে সরকারী বা গণকর্মচারী হিসেবে আপনাদের দল-নিরপেক্ষতা জনগণের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। সরকার ও দল এক নয়। দল রাজনৈতিক সংগঠন। সরকার শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। সরকারি কর্মচারী, গণকর্মচারী বা রাষ্ট্রীয় কর্মচারী যেকোনো পরিচয়ে আপনাদের রাষ্ট্রের আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো বিশেষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনাদের সমর্থন থাকতে পারে। কিন্তু, সরকারি ও গণকর্মচারী বিধায় আপনাদের আচরণে তার প্রকাশ্য প্রতিফলন হবে না। আপনারা প্রকাশ্য আচরণে ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ হবেন। আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। এটি জনগণের প্রত্যাশা এবং আইনের বিধান। সব নির্বাচনে বিশেষত আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে জনপ্রত্যাশা পূরণ করে জনগণের আস্থাভাজন হবেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিগত মার্চ মাস থেকে আজ অব্দি আমাদের সংক্ষিপ্ত দায়িত্বকালে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনে জেলা নির্বাহী ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মানদণ্ড ছিল আদর্শস্থানীয়। এর ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। আমরা কঠোর ভাষায় বলছি, ভয়, ভীতি, পক্ষপাতিত্ব, চাপ বা অন্য যেকোনো কারণে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অবৈধ হস্তক্ষেপ কঠোর হস্তে প্রতিহত না করলে নির্বাচন নির্বাচন হবে না, প্রহসন হবে। পরবর্তীতে অনুষ্ঠেয় আরও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে এর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিষয়টি অনুধাবন এবং চিন্তায় ধারণ করবেন।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উচ্ছৃঙ্খলতা, অসহিষ্ণুতা, সংঘাত, সহিংসতা, পেশিশক্তির প্রয়োগ ইত্যাদি ভোটারদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে নির্বাচন বিতর্কিত হয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের বৈধতা ও ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র সরকারের ভিত্তি। ফলে নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, নির্বিঘ্ন, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হতে হবে। জনমতের প্রতিফলন হতে হবে। বিষয়টিকে গণকর্মচারী হিসেবে আপনাদের ও আমাদের সকলকে এভাবে অন্তরে ধারণ করতে হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সংসদীয় পদ্ধতির বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্নে মতপার্থক্য বা মতের বিভিন্নতা থাকতেই পারে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন নিয়ে সংশয় থাকলেও আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ও সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা যে কোনো সংকট ও সংশয় নিরসনে সামর্থ্য রাখে। মতৈক্য ও সমঝোতা হবে। সংকট ও সংশয় কেটে যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।’
ইভিএম প্রশ্নেও বিতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা কেবল বিশ্বাস করি না, প্রমাণ পেয়েছি ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনি সহিংসতা ও কারচুপি নিয়ন্ত্রণ সহজতর। অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। তবে প্রয়োজনে সব আসনে কিংবা ১৫০ এর অধিক আসনে ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও সামর্থ্য আমাদের থাকবে। সে লক্ষ্যে নির্বাহী ও পুলিশ প্রশাসনকেও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সামর্থ্য ও প্রস্তুতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে একই দিনে একই সময়ে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। কর্মযজ্ঞটি সহজসাধ্য না হলেও, অসাধ্য নয়, এবং সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে সার্থকভাবেই সাধন করতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/এমও