বিনা নোটিশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের কক্ষে প্রশাসনের তালা
৯ অক্টোবর ২০২২ ১১:০০
ঢাবি: কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই একজন অধ্যাপকের কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস বরাদ্দ কমিটি। ভুক্তভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুই অনুষদের ডিনের ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
গতকাল শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে লেকচার থিয়েটার ভবনে গিয়ে নিজ কক্ষ তালাবদ্ধ দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনাটি তিনি ‘চর দখলের’ সঙ্গে তুলনা দিয়েছেন।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সকালে গিয়ে দেখি কক্ষে তালা দেওয়া। দরজায় একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অথচ আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি আমাকে। বিষয়টি অনেকটা চর দখলের মতো হয়ে গেল। আমি সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের ডিনকে ফোন করে জানিয়েছি। এভাবে কোনো কাজ হতে পারে না। ন্যূনতম কার্টেসি দেখানো ছাড়া এ কাজ করা হয়েছে।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন নির্মাণের আগে এই অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর কার্যক্রম কলাভবন ও লেকচার থিয়েটার ভবনে চলমান ছিলো। পরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন নির্মানের পর ধীরে ধীরে বিভাগগুলো স্থানান্তর হতে থাকে। তবে ভবনের কাজ পুরোপুরি না হওয়ায় অনেক শিক্ষক এখনও নতুন ভবনে কক্ষ বরাদ্দ পাননি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ সূত্র জানায়, বিভাগ স্থানান্তরের পূর্বে স্পেইস বরাদ্দ কমিটির সঙ্গে ৪ জন শিক্ষকের কক্ষ এবং একটি ল্যাবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, সেগুলো এখনই স্থানান্তর করা হবে না।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে একজনের শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ কক্ষসহ আরও কয়েকটি কক্ষ আগে থেকেই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের জন্য নির্ধারিত ছিলো।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা অনুষদের ডিনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে পাওয়া গেছে ভিন্ন মতামত।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান আগে থেকেই জানতেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তিনি চিঠি দিয়ে দিলেই এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিলো না।’
অন্যদিকে অধ্যাপক জিয়া রহমান বলছেন, এ ব্যাপারে স্পেস বরাদ্দ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কক্ষগুলো কলা অনুষদকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছেন তিনি। কিন্তু প্রক্রিয়াধীন একটি কাজের মধ্যেই এভাবে কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনা বিব্রতকর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির সারাবাংলাকে বলেন, “উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) নেতৃত্বে স্পেস বরাদ্দ কমিটির তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেসব শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে চলে গেছেন, কলা ভবনে থাকা তাদের রুমগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এ সভাগুলো হয়েছিলো। সেখানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনও উপস্থিত ছিলেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক জিয়া রহমান সাহেব বলেছিলেন, ২৩টি রুম ছাড়া বাকিগুলো কলা অনুষদ ব্যবহার করতে পারবে। রুমগুলোর চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছিলো। তিনি এখনও সেগুলো দেননি। যেহেতু উনার অনুষদের বিষয়, যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের চিঠি দিয়ে দিতেন, তা হলে বিষয়টা সমাধান হতো৷ কিন্তু তিনি সেটা করেননি। কলা ভবনের শিক্ষকদের নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছিলো। পরে উপ-উপাচার্য মহোদয়কে বিষয়টি জানালে তিনি রুমগুলো চিহ্নিত করতে বলেন। এক্ষেত্রে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের রুমসহ মোট দু’টি রুম নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন যদি আমাদের লিখিতভাবে জানাতেন, তবে এই সমস্যা হতো না।”
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৮৮টি রুম আছে কলাভবনে, যেখানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা বসেন। স্পেস বরাদ্দ কমিটির সভায় আমি বলেছি, ২২-২৩টি রুম ছাড়া বাকি সব রুম হস্তান্তর করে দেবো। এ জব্য আমি একটি কমিটিও করে দিয়েছি। এ কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন। এরমধ্যেই কোনো একজন শিক্ষকের রুমে এভাবে বিনা নোটিশে তালা লাগিয়ে দেওয়া দুঃখজনক। আমি খুবই বিব্রত। এভাবে কোনো কাজ হতে পারে না’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও স্পেস বরাদ্দ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/আরআইআর/এমও