Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বনবীর টানে বন্দরনগরীতে লাখো ভক্তের কাফেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ অক্টোবর ২০২২ ১৫:২৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ইদে মিলাদুন্নবী উদযাপন হচ্ছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) প্রতি নিরঙ্কুশ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার টানে বন্দরনগরীর রাস্তায় লাখ লাখ মানুষের সম্মিলন ঘটেছে। আয়োজকদের দাবি, মিলাদুন্নবীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় প্রায় ৭০ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। শোভাযাত্রা ও ধর্মীয় সম্মেলন থেকে বিশ্বশান্তি, মানবতা ও সম্প্রীতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৯ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৯টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে সম্মিলিত শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামে ‘জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী’র পথিকৃৎ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হরিপুরের সিরিকোটের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফীসাধক সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ’র সন্তান সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ।

আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে এবার ইদের মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রার ৫০তম আয়োজন। এতে অংশ নিতে ভোর থেকে নবীপ্রেমী মানুষ জড়ো হতে থাকেন ষোলশহরের জামেয়া মাদরাসা মাঠ ও আশপাশের এলাকায়। জুলুসের রোডম্যাপের মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করেন স্বেচ্ছাসেবক ও ভক্তরা। জুলুসকে ঘিরে মুরাদপুর, বিবিরহাট মাদরাসা এলাকায় শত শত টুপি, মাস্ক, আতর, সুরমা, তসবিহ, পাঞ্জাবি, ইসলামি বই ও খাবারের দোকান বসেছে।

শোভাযাত্রা শুরুর আগে সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ আলমগীন খানকাহে বিশ্বশান্তি, মানবতা ও সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে মোনাজাত করেন। এরপর আলমগীর খানকাহ থেকে তাহের শাহ’কে সুসজ্জিত একটি খোলা গাড়িতে বসিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশ, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি, খাস্তগীর স্কুল, জামালখান, আসকার দীঘির উত্তর পাড়, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর হয়ে আবার মাদরাসা মাঠে ফিরে যায় শোভাযাত্রা।

তীব্র গরমের মধ্যেও এতটুকু ক্লান্তি নেই নবীপ্রেমীদের। দুর্বার কাফেলা ছুটে চলছে তো চলছেই। বিশ্বনবীর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোসাবাই অনিবার্য, আর কিছু ফিরে দেখার ফুরসত নেই ভক্তদের। অন্তত ১০ কিলোমিটার জুড়ে চলা কাফেলায় শুধু মানুষ আর মানুষ। ট্রাস্টের সদস্যরা জানিয়েছেন, এবার শোভাযাত্রায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে আসা ৭০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নগরীর বিভিন্ন স্পটে সড়ক বিভাজকগুলোকে। অংশগ্রহণকারীদের হাতে হাতেও ছিল ব্যানার-ফেস্টুন। হামদ, নাত ও দরুদে মুখর ছিল শোভাযাত্রা। অংশগ্রহণকারীদের শরবত, চকলেট, খেজুর, জিলাপি, জুস বিতরণ করা হয় পথে পথে। বিভিন্ন ভবন থেকে বাসিন্দারা হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানায় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের। শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন তাহের শাহ’র প্রতি।

শোভাযাত্রা শেষে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা মাঠে মিলাদ মাহফিল শুরু হয়। সেখানে জোহরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এছাড়া দোয়া-মোনাজাত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

আয়োজক সংগঠন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৭৪ সাল থেকে ইদে মিলাদুন্নবীতে চট্টগ্রামে জশনে জুলুস (শোভাযাত্রা) হয়ে আসছে। আমাদের এবারের বার্তা হচ্ছে- শান্তি, মানবতা ও সম্প্রীতি। আল্লাহ তার রাসুলকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন রহমত হিসেবে। এই রহমত শুধু মুসলমানের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য। মানবতাই হচ্ছে বড় ধর্ম। দাঙ্গা, হাঙ্গামা, আগুন, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর- এসব ইসলামে নেই। আমাদের হুজুরও বলেছেন, আমান বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি সম্প্রীতি, মানবতা ও শান্তির ডাক দিয়েছেন।’

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুবই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে জুলুস সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেছেন।’

সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহন ছিল তুলনামূলকভাবে কম। শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নগরীর সংশ্লিষ্ট এলাকা ও সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল সীমিত করে পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আগে থেকে শোভাযাত্রার রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) পংকজ দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে জশনে জুলুস হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। আমাদের বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় এক হাজার সদস্য শুধু শোভাযাত্রার জন্য মোতায়েন ছিল। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ শোভাযাত্রা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে যেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’

এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবীর শুভেচ্ছা জানিয়ে এক বিবৃতিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘নবী করিম হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) রাষ্ট্র পরিচালনার নিদর্শন হিসেবে আমাদের সামনে রেখে গিয়েছিলেন একটি নির্দেশিকা চুক্তি, যেখানে সকল ধর্ম, বর্ণ, সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা আছে। সেই দর্শনের আলোকে শান্তির দ্বীন, অসাম্প্রদায়িকতার ইসলাম কায়েম হোক ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক ন্যায়বিচারের বাংলাদেশে। দ্বীনে ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে অপ-ব্যবহারকারীদের হেদায়েত হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বেদাত শেখানো সুন্নিয়ত বিরোধী কট্টরবাদীরা নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মিলাদুন্নবী উৎসব পালনে বিরোধিতা করে। এদের সবাই একটু দেখে রাখুন, চিনে রাখুন। খারাপ সময়ে দ্বীনের শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে এরাই সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িকতার প্রচার করে, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় উৎসাহ দেয় এবং দ্বীনকে অপবিত্র করে রাজনীতি করে। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এদের হেদায়েত দান করুন।’

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

ইদে মিলাদুন্নবী চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর