Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যাচাই ছাড়াই প্রকল্প শুরু, ৬ বার মেয়াদ বাড়লেও শেষ হয়নি কাজ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২২ ১০:২৩

ঢাকা: সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করায় ৬ বার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। ফের সপ্তম বারের মতো বাড়ানো হচ্ছে মেয়াদ। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। গোপালগঞ্জে ‘শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এ অবস্থা। এটির মূল ব্যয় ছিল ৪৬৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এখন আবার ১৯৫ কোটি ২৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭০৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে ৩ বছরের এ প্রকল্পে এখন সময় লাগবে ১১ বছর ৪ মাস।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইতোমধ্যেই চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি মোট ৬৩৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের ৮৯.৮১ শতাংশ। প্রকল্পের কাজের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৬ শতাংশ।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে ১৯টি প্যাকেজের আওতায় যন্ত্রপাতি মালামাল সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের ৩৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৩৭টি প্যাকেজের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। একটি প্যাকেজের কাজের কার্যাদেশ বাতিল ও নতুন কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় চলে যায়। সার্বিক বিবেচনায় এই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।‘

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং দক্ষতার অভাব এমডিজি ও অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হিসেবে চিহিৃত। দেশের চিকিৎসক-রোগী, চিকিৎসক-নার্স, নার্স-রোগী অনুপাতগুলো এবং সরকারি-বেসরকারী মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একইভাবে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলা মেডিকেল শিক্ষা, আধুনিক চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থান সুযোগসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তুলনামূলক পিছিয়ে। এজন্য স্থানীয় জনসাধারনের প্রত্যাশা পূরণ করে প্রতিবছর ১০০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগসহ গোপালগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিবছর ১২৫ জন নার্সিং শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগসহ একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়, ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারিত হয় ৪৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে পিডব্লিউডির রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে রেট সিডিউল-২০১৪ অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৫০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়।

সংশোধিত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ মন্ত্রণালয় প্রথমবার এক বছর ৪ মাস বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৭ সালের জুনে নির্ধারণ করা হয়। এরপর সীমানা প্রাচীর নির্মাণে টেন্ডারগত জটিলতা ও ছাত্রী নিবাসের ফিনিশিং কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় অবশিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়।

প্রকল্পটির নির্মাণ খাতে ব্যয় হ্রাস এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে নির্মাণ কাজের রেট সিডিউল পরিবর্তন, পূর্ত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের ব্যয় বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ভূমি উন্নয়ন এবং কিছু নতুন অঙ্গ সংযোজনের জন্য মোট ৭০৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের হতে ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধন ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয়। কার্যক্রম বিভাগ কোভিড-১৯ এর সময়ে গত বছরের ২২ জুন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া তৃতীয় বার ২০১২ সালের মার্চ হতে গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মার্চ হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এতেও শেষ হয়নি প্রকল্পটি এ প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের জন্য প্রায় তিন মাস কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল হলেও নির্মাণ সামগ্রীর উৎপাদন বন্ধ ও বৈদেশিক আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় পাথর আমদানি সম্ভব না হওয়ায় আরও কিছু সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে।

নার্সিং কলেজ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ২০২০ সালের ১৩ জুন মারা যাওয়ায় ঠিকাদারের উত্তরাধিকারিদের দ্বন্দ্বের কারণে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে কাজের কার্যাদেশ গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাতিল করা হয়। পরে সম্পাদিত কাজের পরিমাপ গ্রহণ করে অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এ অবস্থায় প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। আগে এরকম নিয়ম ছিল না। তবে আইএমইডি প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়ার যেসব কারণ চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না হওয়া। এসব বিষয়ে সামনে থেকে আরও সতর্ক হতে হবে।’

সারাবাংলা/জেজে/এমও

প্রকল্প শুরু শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর