‘ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে মশা মারতে হবে, এটি আমাদের কাজ নয়’
১০ অক্টোবর ২০২২ ২১:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে মশা মারতে হবে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, সিটি করপোরেশনের কাজ।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন মন্ত্রী।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে গত নয় মাসে মোট ১ হাজার ১৬৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নগরীর বাসিন্দা। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। চিকিৎসাধীন আছেন ৫০ জন। সুস্থ হয়ে ফেরত গেছেন ১ হাজার ১০৮ জন।
অনুষ্ঠানের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাবার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে জেলা-উপজেলা ও শহর পর্যায়ে যারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা, মশার প্রকোপ একটু বেশি থাকে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে চিকিৎসা দেওয়া, সেটা আমরা দিচ্ছি। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে মশা মারতে হবে। সেটা আমাদের (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) দায়িত্ব নয়, সেই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।’
সিটি করপোরেশন ও জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে মশা নিধনের কাজ আরও জোরদারের অনুরোধ করছি। জমে থাকা পানির উৎস যেখানে এডিস মশা জন্ম নেয়, সেখানে স্প্রে’র জন্য অনুরোধ করছি। আর জনসাধারণকে বলব, আপনাদের বাসাবাড়ির সামনে কোথাও যেন পানি জমতে না পারে। এডিস মশার উৎপত্তি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।’
এর আগে এভারকেয়ার গ্রুপের বিনিয়োগে চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম মাল্টিস্পেশালিটি টারশিয়ারি কেয়ার হাসপাতালটির উদ্বোধন করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক যৌথভাবে এর উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করা। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মানুষের জন্য বিশ্বসেরা ও গুণগত মানের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও উন্নত সেবা দিতে সক্ষম বৈশ্বিক হাসপাতাল চেইন এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্বোধন আমাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে এভারকেয়ার গ্রুপ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এ হাসপাতালটির উদ্বোধন বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভাগ ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এভারকেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান ম্যাথু হোবার্ট, এভারকেয়ার হাসপাতাল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বব কুন্দানমাল, এভারকেয়ার গ্রুপের গ্রুপ সিইও ম্যাসিমিলিয়ানো কোলেলা এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪৭০ শয্যাবিশিষ্ট এভারকেয়ার হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার জরুরি বিভাগ, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), ২৭টি বিশেষ ও উপ-বিশেষ বিভাগ আছে। ২৪ ঘণ্টার ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি অ্যান্ড কার্ডিয়াক সার্জারি সার্ভিসসহ কম্প্রিহেনসিভ হার্ট সেন্টার, একটি মা ও শিশু সেন্টার, একটি নিউরোসায়েন্স সেন্টার, বোন অ্যান্ড জয়েন্টস সেন্টার এবং ডাইজেস্টিভ ডিজর্ডার সেন্টার সহ ১২টিরও বেশি উন্নত মানসম্পন্ন সেন্টার আছে।
চট্টগ্রামের অনন্যা আবাসিক এলাকায় মোট ৪ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট আয়তনের ওপর নির্মিত এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। চট্টগ্রামের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে এটি মেডিকেল, সার্জিক্যাল ও রেডিয়েশনসহ ক্যানসার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ও সর্বাধুনিক সেবা নিশ্চিত করবে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম