মেরামতের আড়ালে বানাতো নকল মোবাইল ফোন
১১ অক্টোবর ২০২২ ০০:২৩
ঢাকা: নষ্ট মোবাইল ফোন মেরামত করার কথা বলে চীন থেকে যন্ত্রপাতি কিনে আনতো। পরে নিয়ম না মেনে এই যন্ত্রপাতি দিয়েই তৈরি করা হতো নোকিয়া ও স্যামসাংয়ের মতো ব্র্যান্ডের নকল ফোন। আর যারা এইসব ফোন তৈরি করতো তাদের কেউই উচ্চ শিক্ষিত নয়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া দু’জন মেরামতের আড়ালে বানাতো এসব ফোন। তাদের একটি চক্র রয়েছে। শনিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর হাতির পুলের মোতালেব প্লাজার পেছনের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সেই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে এদের সম্পর্কে জানাতেই ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলন। ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ এই চক্র সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ডিবির হাতে গ্রেফতার ওই ছয়জন হলেন- মশিউর রহমান, সাগর হোসেন, রহমত আলী, সুজন আলী, তরিকুল ইসলাম বাবু ও মনির হোসেন। অভিযানের সময় নকল কারখানা থেকে নোকিয়া ব্র্যান্ডের ৩১৩টি ও স্যামসাংয়ের ২০৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এছাড়া জব্দ করা হয় নকল ফোন তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দাবি করে বলেন, ‘এসব নকল মোবাইল ফোন বিক্রির কারণে সরকার ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এই ফোনগুলো এক থেকে দুই মাসে নষ্ট হয়ে যেত। নিয়ম না মানায় এসব মুঠোফোনের তেজষ্ক্রিয়তার তারতম্য বা নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে না। তাই ব্যবহারকারীরা থাকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিকে। এসব মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের আশঙ্কাও থাকে সবচেয়ে বেশি।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইএমইআই নম্বর বদলে মোবাইল ফোন তৈরির কারণে এসব ফোন ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই অপরাধ করতে পারে। পরে তাদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়। চক্রটি পাঁচ/ছয় বছর ধরে এই কাজ করে আসছিল বলে জানায় ডিবি। ডিবি বলছে, চক্রটি ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নামি মার্কেটে এসব মোবাইল ফোন ছড়িয়ে দেওয়ার বড়ধরনের পরিকল্পনা করেছিল। যেসব ক্রেতা সস্তায় ফোন কিনতে চান, দোকানদাররা মূলত তাদের এসব মোবাইল ফোন গছিয়ে দেন বলে জানা গেছে।
এভাবে মুঠোফোন তৈরির কারণে দামি ব্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে দেশের গ্রাহকেরা উন্নত প্রযুক্তির মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন ইউনিয়ন লিমিটেড গ্রুপের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার আসিফ মোহাম্মদ আবিদ। সংবাদ সম্মেলনে আসা বাংলাদেশে নোকিয়ার অনুমোদিত প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইউনিয়ন লিমিটেডের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাইরের যে স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা কিন্তু আমাদের রফতানির অনুমতি দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, অনুমতি দিলে তোমাদের এখানে গুণগত মান ধরে রাখতে পারবে কি না?’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম