আওয়ামী লীগের উসকানির ফাঁদে পা দেবেন না— নেতাকর্মীদের আমীর খসরু
১১ অক্টোবর ২০২২ ১৪:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আওয়ামী লীগের’ উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য রেখে চট্টগ্রামে বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই মহাসমাবেশ বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সকালে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি বিষয়ে জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। বুধবার বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বিভিন্ন চাপের অভিযোগ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কত ধরনের চাপ, বাধা-বিপত্তি আছে, কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে আমাদের নেতাকর্মীরা আগামীকালের (বুধবার) সভা সফল করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে তো একটা রেজিম (রাজত্বকাল, যেখানে রাজার সঙ্গে প্রজার অংশগ্রহণ নেই) চলছে। আওয়ামী লীগকে তো আমি সরকারি দল বলি না, আওয়ামী লীগ রেজিমের একটা অংশ। তারা বুঝতে পারছে, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই, তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আর রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারছে না। এজন্য বিএনপির সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।’
নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ধৈর্য্যধারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি, আপনারা এই (আওয়ামী লীগের) ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, সেভাবেই শান্তিপূর্ণ, আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে মহাসমাবেশ শেষ হবে ইনশল্লাহ। আমরা কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেব না। অনেকে চেষ্টা করবে এদিক-সেদিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, আমাদের সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আমাদের শক্তিক্ষয় করার জন্য তারা অনেককিছু করবে, অনেককিছু বলবে, অনেক গুজব ছড়াবে, এতে কর্ণপাত করবেন না। ধৈর্য্য ধরবেন। পূর্ণমাত্রার ধৈর্য্য ধরতে হবে। ধৈর্য্যের যাতে কোনো অভাব না হয়।’
‘আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। কে কি করছে, কে কি বলছে, কে কোথায় উসকানি দিচ্ছে এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেন না। ওরা চাচ্ছে, আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট (ভিন্নখাতে) করার জন্য। আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। জনগণের জোয়ার যেখানে নামে সেখানে কোনো শক্তি বাধা দিতে পারে না। যেখানে জনগণের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার চলছে, সেখানে কেউ বাধা দিতে পারবে না। সুতরাং আমাদের এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই, আমরা আমাদের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাব। কিছু কিছু উসকানি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। সেদিকে কান দেবেন না। কান বন্ধ করে শুধু কাজটা করে যাবেন। কোনো বাধা এই জনস্রোতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’
বুধবারের মহাসমাবেশ বাংলাদেশের আন্দোলনের মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের সমস্ত বিভাগে জনগণের মুক্তির যে জাগরণ উঠেছে, আমাদের নেতাকর্মীরা এতে উজ্জীবীত। যার যার এলাকায় সবাই মাঠে আছে মহাসমাবেশকে সফল করার জন্য। জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমরা চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ ডেকেছি। ২০১১ সালেও এখানে সমাবেশ করেছিলাম, বেগম খালেদা জিয়া এসেছিলেন। ২০-২৫ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। আজ আমাদের নেত্রী আসবেন না, কিন্তু যে অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি পেতে চাচ্ছে, যে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, সেটার প্রতিফলন ইনশল্লাহ পলোগ্রাউন্ডের মাঠে দেখতে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে পলোগ্রাউন্ডের মাঠের দিকে। এই সমাবেশ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে। আমাদের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশকে সফল করার জন্য প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি অঞ্চলে কাজ করেছে। আমাদের দল যে চট্টগ্রামে কত শক্তিশালী, সেটা তারা প্রমাণ করেছে। একটা কথা আমরা বারবার বলি, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছে। তারা সেটা বারবার প্রমাণ করছে যে- তারা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে গেছে। এজন্য বিএনপির শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া মানে বিএনপির শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া।’
‘সমাবেশের নামে নৈরাজ্য করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব’- আওয়ামী লীগের এই হুঁশিয়ারি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বাংলাদেশে আইন আছে, সংবিধান আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কোনো দলের দায়িত্ব নয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আমি আশা করব, যাদের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, তারা যাতে সেই দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করে। কোনো দলের ওপর যেন তারা সেই দায়িত্ব ন্যস্ত না করে। তাদের হুঁশিয়ারির মানে তাদের দুর্বলতার প্রকাশ।’
সমাবেশে নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে যোগ দেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যে সভা-সমাবেশ করছি, দেশে-বিদেশে প্রমাণ হয়েছে আমরা খুবই সুন্দর-শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। আমাদের নেতৃত্ব থেকে পরিস্কারভাবে বলা আছে, প্রত্যেকটি সভা-মিছিল, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে। এর একটাই কারণ, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপি রাজনীতি করে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। দেশের একেকজন নাগরিক লাঠির চেয়ে শক্তিশালী, চাইনিজ রাইফেলের চেয়েও শক্তিশালী। তারা যে অস্ত্রশস্ত্রের কথা বলে তার চেয়েও শক্তিশালী। আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের দরকার নেই, লাঠিরও দরকার নেই। লাঠি নিয়ে কারা নামে- যারা নিজেরা দুর্বল তারা লাঠি নিয়ে নামে। প্রতিরোধ করতে কারা বলে– যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেরা কিছু করতে পারে না তারা বলে।’
‘আমরা তো বলি- তোমরাও (আওয়ামী লীগ) সমাবেশ কর। বিএনপি কাউকে বাধা দেবে না, প্রতিরোধও করবে না। সভা-সমাবেশ করা সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং সেটাকে কেউ প্রতিরোধ করতে চাইলে সেটা ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আমি আশা করব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করবে।’
সমাবেশ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। যাদের মধ্যে আতঙ্ক আছে তারা চেষ্টা করবে, সভাটাকে যেন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে। যাদের সাথে জনগণ নেই, যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তাদের ভয় জনগণ। যারা জনগণকে ভয় পায়, জনসমাবেশ, জনসভাকে ভয় পায়, তারা অনেক কিছু করবে। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে জনসভা করব।’
প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন দিনের শেষে বাংলাদেশের যে সংবিধান আছে, সেটার শপথ করে দায়িত্ব পালন করছে। দিনের শেষে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা। গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষা করা হচ্ছে প্রশাসনের দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্বটা পালন করবে সেটা জাতি আশা করে।’
বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে ‘বিএনপির কোনো বক্তব্য নেই’ জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই নিরপেক্ষ সরকার রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সাথে আলোচনা করে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন দেশে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই নির্বাচন কমিশন না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ সরকার, অবৈধ নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। নির্বাচন কমিশনের তো প্রশ্নই উঠে না, এই সরকারের অধীনেও কোনো নির্বাচন হবে না।’
বেগম খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা কি বিচার বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে ? সরকার যদি বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কি বিচার বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নাকি ? তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা বিচার বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য যারা দেন দুঃখজনক, তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বজ্ঞান আছে বলে আমি মনে করি না।’
আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রূপরেখা খুব স্পষ্ট। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার জঞ্জাল পরিস্কার করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। জনগণের ভোটে একটি নির্বাচিত সংসদ হবে, সরকার হবে, যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে।’
মহাসমাবেশে কত লোক সমাগমের টার্গেট নেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সংখ্যা তো বলি না। জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। জনগণ সেটা প্রমাণ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, দক্ষিণের আহবায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগরের আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ