বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের কথায় মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না
১১ অক্টোবর ২০২২ ১৭:০৯
ঢাকা: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, প্রতিদিন ৪ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সেপ্টেম্বর থেকে স্বাভাবিক হবে, এখন তারা বলছেন নভেম্বরে স্বাভাবিক হবে। কেউ জানে না কখন থেকে বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। দেশের মানুষ সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থলে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু, টাকার অভাবে জ্বালালি তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিশ্ব বাজারে গ্যাসের দাম কমেছে কিন্তু টাকার অভাবে তাও কিনতে পারছে না সরকার।
দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শ্রীলংকা দেউলিয়া হওয়ার আগে সে দেশে লোডশেডিং ছিলো, ডলারের দাম বেড়েছিলো, জ্বালানি তেল কিনতে পারেনি, আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিলো অস্বাভাবিক হারে। ঠিক একই চিত্র বাংলাদেশে, এখানেও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে, ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার।
জি এম কাদের বলেন, বিদ্যুতের অভাবে শিল্প কলকারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না, উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে কাজ হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। টাকার দাম কমে যাওয়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আবার শ্রীলংকার মতই মেগা প্রকল্পে লক্ষ-কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। একই সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের এমন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছেন। সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। ১০ টাকা দামে চাল খাওয়াবে ঘোষণা দিয়েছিলো, এখন চালের কেজি ৭০ টাকা। এমন দুঃসহ অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়।
হামলা-মামলায় জাপার নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, আগামীকাল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন। অথচ, সেখানে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলা ও মিথ্যা মামলার কারণে ঘরে থাকতে পারছে না।
তিনি বলেন, সরকার সমর্থকরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। গাইবান্ধায় হাজার-হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। আবার প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা সরকারি দলের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে আছেন। আসলে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশের মানুষ এখন আর নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যারা ভোট করতে চায় তারাও জানে নির্বাচন করতে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় না।
নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়। তাই, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ কারণেই, সাধারণ মানুষও ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
জি এম কাদের বলেন, দেশে বিরাজনীতিকরণ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে, দেশে আর রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল থাকবে না। টবে সাজানো ফুলের বাগানের মত কিছু দল থাকবে। যেমন-টবের ফুলে সৌরভ থাকে কিন্তু মাটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। ঠিক তেমনি, মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকবে না, এমন দূর্বল কিছু রাজনৈতিক দল থাকবে। তাই, জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।
এসময় প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আনিস উল ইসলাম মন্ডল, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, মোঃ জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এ এইচ এইচ/এনইউ