দাবি আদায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে পারে জাপা
১১ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৫
ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইভিএম পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আন্দোলনের মাঠে রয়েছে। তবে এবার নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। সেইসঙ্গে সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সংসদে তারা কঠোর অবস্থান নেবে। প্রয়োজনে ওয়াকআউটসহ সংসদ থেকে পদত্যাগও করতে পারে দলের এমপিরা। সম্প্রতি দলটির প্রেসিডিয়াম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল রাজপথে যে ধারায় আন্দোলন করবে জাতীয় পার্টি তা করবে না। মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, ঘেরাও কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদান এসবের মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকবে তারা। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি তারা পালন করবে না। তবে বিএনপি দলীয় এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিলে, সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিও অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া আসন্ন অধিবেশনে সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করতে পারেন তারা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাপা প্রেসিডিয়াম সভায় দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তার মতে, জাপার জনসমর্থন বেড়েছে। ফলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং জাপা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে অনেকগুলো আসন পাবে। আর জোটগতভাবে করলেও আসন নিয়ে দরকষাকষি করা যাবে।
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অর্থাৎ নির্বাহী ক্ষমতার অধীনে অনুষ্ঠিত হোক তা আমরা চাই না। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। ইভিএম তো সরকার তার সুবিধার জন্য নিয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নিতে দেওয়া যাবে না।’
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি দ্বিতীয় দফা সংলাপের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলে জাপাও পৃথকভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। তবে সে কর্মসূচি হবে- মানববন্ধন, বিক্ষোভ ইত্যাদি। তবে বিএনপি যদি আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়, জাতীয় পার্টি সেক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবে।
আগামী ডিসেম্বরে বিএনপি মহাসবেশের ডাক দিয়েছে। ওই মহাসমাবেশের পরিস্থিতি দেখে জাতীয় পার্টিও একটি মহাসমাবেশ ডাকবে। সেটি পার্টির প্রতিষ্ঠাবির্ষিকীর সময় অর্থাৎ জানুয়ারিতে হতে পারে বলে জানা গেছে।
অন্য একটি সূত্র বলছে, আসলে সরাসরি জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপি সমঝোতা হচ্ছে না। একটু ঘুরিয়ে সমঝোতা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের যোগাযোগ রয়েছে। সেদিক থেকে পরমার্শ নিয়ে জাতীয় পার্টি সামনের দিকে এগুচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্র বলেছে, হঠাৎ করে জিএম কাদের সরকারের সমালোচনা করে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে তার। তাই বিরোধীদলকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না, তাদের ওপর নিপীড়ন হচ্ছে, দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে, জাতীয় পার্টি দাসত্বের রাজনীতি করে না- এমন বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি। তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে বিএনপির সঙ্গে জাপার একটি সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতার বিষয়টি নির্বাচনের ক্ষণ ঘনিয়ে আসার পর প্রকাশ পাবে।
এ সব বিষয় জানতে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মোবাইল ফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর পর তার হোয়টসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি তার জবাব দেননি। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশের বাইরে উগান্ডায় অবস্থান করছেন। তাকেও একটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে তিনিও সেই বার্তার কোনো জবাব দেননি।
তবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় পার্টি আন্দোলন করবে। তবে সে আন্দোলন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জ্বালাও-পোড়াও না। জাপার আন্দোলন হবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ইত্যাদি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ থেকে জাপা পদত্যাগ করবে না। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভিন্ন কোনো কনসেপ্ট ও ইভিএম পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে জাপা রাজপথ ও সংসদে লড়বে। প্রয়োজনে অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করবে দলটি।’
সারাবাংরা/এএইচএইচ/পিটিএম