যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশ
১২ অক্টোবর ২০২২ ২১:১৮
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে এখনও এগিয়ে বাংলাদেশ। রফতানির শীর্ষে থাকা দুটি দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের প্রবৃদ্ধি বেশি। দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যেখানে বিশ্ব থেকে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৭ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই প্রায় ৫৪ শতাংশ। একই সমেয় দেশটিতে চীন ও ভিয়েতনামের পোশাকের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৩৭ ও ৩৩ শতাংশ। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অটেক্সার তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি- আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৬৬৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ৪৩২ কোটি ডলারের পোশাক। ফলে চলতি বছরে দেশটিতে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২৩২ কোটি (২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন) ডলার।
তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৬ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এই আয় ছিল ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে এই আয় ৩ দশমিক ৪৮ ও ২০১৯ সালে ৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। সেই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
এদিকে, সারাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই হিসাব ২০২১ সালের প্রথম আট মাসের সঙ্গে ২০২২ সালের প্রথম আট মাসের। অটেক্সার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চীন ও ভিয়েতনাম থেকে বেড়েছে যথাক্রমে ৩৭ ও ৩৩ শতাংশ। তবে রফতানি বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটিতে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে চীন ও ভিয়েতনাম। ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের নিচে। অটেক্সার তথ্যমতে, প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রফতানি আয় ১৫ দশমিক ৫৫, ভিয়েতনামের ১২ দশমিক ৮০, বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৬৪, ইন্দোনেশিয়ার ৩ দশমিক ৯১ ও ভারতের রফতানি আয় ৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংকট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল ইন্ডাস্ট্রির দ্রুত পুনরুদ্ধার ঘটছে। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের রফতানিতে এটি প্রতিফলিত হয়েছে। হতাশাব্যাঞ্জক বিশ্ব অর্থনীতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির প্রেক্ষাপটে চলতি মাসে এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে এ ধরনের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পূর্বভাস পাওয়া যায় না। আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি বাড়লেও অক্টোবর থেকে রফতানি প্রবণতা নেতিবাচক হতে পারে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চীন টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে। তারা এখন হাইটেক পার্ক ও হাই ভ্যালু ইন্ড্রস্ট্রিতে বেশি বিনিয়োগ করছে। আবার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ রয়েছে। সবদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ এখন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। একইভাবে দেশটিতে ভিয়েতনামের রফতানিও কিন্তু বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সামনের দিনে পোশাক রফতানি কিছুটা কমার শঙ্কা রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে দেশের নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমেরিকার বাজারে আগে আমাদের শেয়ার ছিল ৫ থেকে ৬ শতাংশ। সেটা এখন বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পোশাক রফতানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণে হচ্ছে চীন-আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ। চীনের বাইরে আমেরিকার ক্রেতাদের প্রথম চয়েজ বাংলাদেশ। ফলে আমেরিকার ক্রেতারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি পোশাক কিনছে। প্রথম ৮ মাসে আমেরিকার বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে এবং সামনের দিনে আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা থেকে আমরা অনেক কটন আমদানি করি। তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি, আমরা যেসব কটন আমদানি করি, সেইসব কটন দিয়ে উৎপাদিত পোশাক রফতানিতে ডিউটি ফ্রি এক্সেস দিতে। যদি আমেরিকার কটনে উৎপাদিত পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় তবে দেশটিতে আমাদের রফতানি আরও অনেক বেশি বাড়বে।’
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম ৮ মাসে রফতানি বৃদ্ধি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। ওই সময়ে দেশটিতে এমনিতেও রফতানি ভালো থাকে। নানা কারণেই আমেরিকা থেকে আগের তুলনায় এখন অর্ডার বাড়ছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সামনের দিনে দেশটিতে পোশাক রফতানি বাড়া-কমার বিষয়টি নির্ভর করছে তাদের অর্থনীতির ওপর। এখনও বলা যাচ্ছে না যে, পোশাক রফতানি একেবারেই কমে যাবে কিংবা স্থির থাকবে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম