ডিসি-এসপিদের আচরণে বিব্রত ইসি আনিছুর অফিস করছেন না
১২ অক্টোবর ২০২২ ২২:১১
ঢাকা: জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের আচরণে বিব্রত হয়ে তিন দিন ধরে অফিস করছেন না নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। তিনি কবে থেকে অফিস করবেন কিংবা আদৌ অফিস করবেন কি না তা নিয়েও নানাধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন— এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়েছে গণমাধ্যমে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানকে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের দায়ী করেন। পাশাপাশি জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপিদের তরফে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরেন। কোনো কোনো এমপি ইসি সদস্যদের প্রকাশ্যে গালি দিচ্ছেন বলেও জানান। এ সময় ইসি কমিশনার ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নখ-দন্তহীন এবং তারা মন্ত্রী-এমপিদের ছাড়া চলতে পারেন না।’
এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য বরাদ্দ গাড়ির তেলের টাকা ডিসিরা দেন না বলেও উল্লেখ করেন ইসি আনিছুর রহমান। তার বক্তব্যের এই পর্যায়ে সভাকক্ষের মধ্যেই একযোগে ডিসি-এসপিরা হইচই শুরু করেন। এ সময় সিইসিসহ অন্য কমিশনার এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবও মঞ্চে ছিলেন। এক পর্যায়ে কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘তাহলে কি আপনারা আমার বক্তব্য শুনতে চান না।’ তখন সবাই একযোগে ‘না’ বললে নিজের বক্তব্য শেষ না করেই বসে পড়েন তিনি।
এদিকে, ইসির কমিশনারের প্রতি নিয়মবহির্ভূত ও নজিরবিহীন এমন ঘটনার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। এমনকি ইসি থেকেও সিইসি কিংবা অন্য কোনো কমিশনার এর প্রতিবাদ করেননি। তবে এ ঘটনাকে ‘সামান্য ভুল বোঝাবুঝি’ বলে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। এতে ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছেন আনিছুর রহমান। ঘটনার দিনের পর থেকে আর অফিসে যাননি তিনি। এমনকি কোনো ছুটিও নেননি, কিংবা সিইসিকে অবহিত করেননি বলে জানা গেছে। পাশাপাশি তিনি কারও ফোনও রিসিভ করছেন না।
এ ব্যাপারে গত দু’দিন একাধিক গণমাধ্যমে মোবাইল ফোনে আলাপকালে হতাশা প্রকাশ করেন আনিছুর রহমান। পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘কেন যে আমি এখানে এসেছিলাম। আর কারাই বা আমার নাম দিল।’ কমিশনে আর ফিরবেন কি না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘জানি না। নাও ফিরতে পারি।’
এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার গাজী শাহওনেয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কয়েকজন ডিসি-এসপি যে আচরণ করেছেন তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা শিষ্টাচারবর্হিভূত।’ তিনি বলেন, ‘কমিশনার একটি সাংবিধানিক পদ। ফলে এই পদের কারও বক্তব্য শোনার অপারগতা প্রকাশ সরকারি কর্মচারীরা করতে পারেন না।’
এদিকে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংবিধানিক পদে কর্মরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে ডিসি-এসপিরা যে আচরণ করেছেন তা অসৎ আচরণের মধ্যে পড়ে। ওখানে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না। তবে ধরে নিলাম কমিশনার সাহেব ডিসি, এসপিদের নিয়ে জেনারালাইজড বক্তব্য দিয়েছেন। তা না করে তিনি যদি সুনির্দিষ্টভাবে বলতেন যে, অমুক জেলার ডিসি, অমুক জেলার এসপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ রয়েছে- তাহলে ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে ইসি যাই বলুন না কেন, একজন সাংবিধানিক পদের ব্যক্তির সঙ্গে ডিসি-এসপিদের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এ বিষয়ে সিইসি তার বক্তব্যে কিছু বললে ভালো হতো। বিশেষ করে ডিসি-এসপিদেরে স্মরণ করিয়ে দিতে পারতেন যে, একজন সাংবিধানিক পদের ব্যক্তির সঙ্গে কেমন আচরন করতে হয়।’
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার একটি সাংবিধানিক পদ। এই পদে দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তির প্রতিদিন অফিস করতে হবে, কিংবা অফিসে না আসলে ছুটি নিতে হবে- বিষয়টি এমন নয়। তবে কোনো কমিশনার ইসিতে না এলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অবহিত করার একটা রীতি (নর্মস) রয়েছে। কিন্তু সেটা কোনো আইন নয়।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম