Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ.লীগকে বাড়ি ফিরতে দেব না— সাকাপুত্রের হুমকি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২২ ২৩:১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া ‘যুদ্ধাপরাধী’ সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না।

‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না। তবে বিএনপি নেতা হিসেবে হুম্মামের বাবা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও চাচা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সবসময় এই স্লোগান দিতেন।

বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ছিলেন।

নিজেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে পরিচয় দিয়ে বক্তব্যে হুম্মাম কাদের বলেন, ‘বেশি সময় নেব না। অনেক সিনিয়র নেতা এসেছেন। আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি কোনো বড় নেতা হিসেবে নয়। আজকে এসেছি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে। আপনারা সবাই সঙ্গে থাকলে আমাদের পরাজিত করার শক্তি কারও নেই।’

সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকারকে বলে দিতে চাই, ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়িতে যেতে পারবেন না। প্রত্যেকটা শহিদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করব।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ‘যাওয়ার আগে বাবার স্লোগান আপনাদের বলে যেতে চাই, নারায়ে তাকবির, নারায়ে তাকবির, নারায়ে তাকবির। আমরা যখন আবার এই ময়দানে আসব সরকার গঠন করে আসব।’ হুম্মাম কাদের যখন ‘নারায়ে তাকবির’ বলে তিন বার স্লোগান দেন, বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে জবাব দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাবেশে সভাপতিত্ব করা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নারায়ে তাকবির আমাদের সাংগঠনিক স্লোগান নয়। পুরো সমাবেশে এই স্লোগান আর কোনো নেতা দেননি। উনি (হুম্মাম) দিয়েছেন উনার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে। দেওয়ার আগে উনি নিজেই বলেছেন যে, বাবার স্লোগানটা দিচ্ছি। যেহেতু উনার বাবাও এই স্লোগানটা দিতেন। তাই ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে হয়ত উনি দিয়েছেন।’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে অংশ নেওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে। তারা বাবা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন। পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ১৯৭১ সালের ২৮ ডিসেম্বর নৌযানে করে দেশ থেকে পালানোর পথে আনোয়ারা উপজেলার গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন ফজলুল কাদের। বন্দি অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় আহত হয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশ ছেড়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি দেশে ফিরে রাজনীতি শুরু করেন। মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি, এনডিপি এবং ফাঁসিতে দণ্ডিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হলে সালাহউদ্দিন কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় প্রমাণিত হওয়ায় সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেন আদালত। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির পর কিছুদিন রাজনীতির মাঠে থাকলেও পরে পর্দার আড়ালে চলে গিয়েছিলেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। গত একবছর ধরে তাকে আবার সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। সাকা পরিবারের মধ্যে তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন। তবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

টপ নিউজ সাকাপুত্র হুমকি হুম্মাম কাদের চৌধুরী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর