‘ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিয়ে এজেন্টরাই ভোট দিয়েছে’
১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৭:৫৮
ঢাকা: কমিশন সম্মিলিতভাবে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিব উল আউয়াল। তিনি বলেন, আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা দেখেছি, কন্ট্রোল ইউনিটে ভোটাররা আঙুলের ছাপ দিলেও তারা ভোট দিতে পারেননি। ভোটাররা আঙুলের ছাপ দিলেও গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিয়েছে এজেন্টরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, মো. আলামগীর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে এজেন্ট ছাড়াও বহিরাগতরা ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। এছাড়া ভোটাররা আঙুলের ছাপ দিলেও গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিয়েছে এজেন্টরা। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারদের ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তাদের নিতে দেখা যায়নি। তখন কমিশন থেকে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি ও বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় নাই। এই ধরনের একটি আইন বহির্ভুত ভোটাভুটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুপুর আড়াইটার দিকে গাইবান্ধা- ৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে। যাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই আসনের নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘গাইবান্ধা- ৫ আসনের উপ-নির্বাচনের গুরুত্বের কারণে এখানেও ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও প্রতিটি কেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গতকাল সকাল আটটায় যথারীতি ভোট শুরু হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে আমিসহ অন্যান্য কমিশনার, সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তি ও পরে মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আমারা তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই, ভোট কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি পরা। তাদের বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কা প্রিন্ট করা। এছাড়া মহিলা এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরে আছেন। যা আচরণ বিধিমালার ১০ (ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে।’
গাইবান্ধা নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে জনমনে কিছু বিভ্রান্তি থাকতে পারে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা টকশোতে শুনেছি, কেউ আনন্দিত হয়েছেন, কেউ ব্যথিত হয়েছেন, কেউ প্রতিবাদ করেছেন, কেউ সমবেদনা জানিয়েছেন। আমাদের মনে হয়েছে, এতে করে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সেই বিভ্রান্তি অপলোপনের জন্য কিছু ব্যাখ্যা আমাদের দেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, আমরা কী করে এখানে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম। কেউ বলছেন, ইসি অফিসে বসে এতগুলো ভোট কী করে দেখল। অনেকে জানেন না, আমরা আধুনিক একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ তৈরি করেছি। সেখানে আধুনিকভাবে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে প্রতিটি কেন্দ্রে কীভাবে নির্বাচন হচ্ছে— তা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আছে। ঘটনাস্থলে থাকার চেয়ে আরও বেশি নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ আছে। এই বিষয়টি হয়তো অনেকের জানা নেই।’
ক্ষমতাসীন দল প্রশ্ন তুলেছে, ঢাকা থেকে কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কেন হয়েছে, কী কারণে হয়েছে, কিছুই আমরা বলতে পারব না। আমরা যেটা স্বচক্ষে দেখেছি সেটাই ফ্যাক্ট। তদন্তের পরে এটা নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম