ধর্ষণের পর খুন: রিকশায় আঁকা ‘ময়ূর-সাপ’ সন্ধান দিল অপরাধীর
১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় একমাস আগে চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কলোনির পরিত্যক্ত এক বাসায় সাত বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় জড়িত এক রিকশা চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর বেশভূষা পাল্টে ফেলায় তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। কিন্তু সে যে রিকশা চালাত তার পেছনের অংশে ‘ময়ূর ও সাপের’ একটি চিত্রাঙ্কন আছে। সেই চিত্রাঙ্কনকে সূত্র ধরেই রিকশা চালককে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (১২ অক্টোবর) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার বেপারিপাড়া এলাকা থেকে তাকে বন্দর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার রিকশা চালক ওসমান হারুন মিন্টুর (৪৪) বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। চট্টগ্রাম নগরীর সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর সড়কে একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা চালিয়ে তিনি আগ্রাবাদ-সিডিএ এলাকায় চালাতেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে পোর্ট কলোনির ৮ নম্বর সড়কের মুখে একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছিল বন্দর থানা পুলিশ। মৃত সুরমা আক্তার (৭) নগরীর বড়পোল এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মো. কাউছারের মেয়ে। সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, সুরমাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে এবং আশপাশের আরও ৪-৫টি সড়কে থাকা কমপক্ষে ৩০০ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন হিসেবে এক রিকশা চালককে শনাক্ত করা হয়। তবে কোনোমতেই রিকশা চালকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
গ্রেফতারের পর ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদুর বলেন, ‘হত্যাকান্ডের পর নিজের বেশভূষা পাল্টে ফেলেছিল রিকশা চালক ওসমান। আগে লুঙ্গি পড়ে রিকশা চালালেও পরবর্তীতে সে প্যান্ট-শার্ট পড়ে রিকশা চালানো শুরু করে এবং মুখে দাঁড়ি রেখে দেয়। নিজেকে আড়ালে রেখে গ্রেফতার এড়াতে গত এক মাসে তিনটি বাসা বদল করে। এ কারণে কোনোভাবেই তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।’
ওসমানকে শনাক্ত ও গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেওয়া বন্দর থানার আরেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিশোর মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেহভাজন চালকের রিকশার পেছনে একটি ময়ূর ও সাপের আঁকা ছবি আছে। এবার আমরা খবর নিতে শুরু করি, এই শহরে কে কে রিকশায় ময়ূর-সাপ আঁকেন। একজন পেইন্টারের সন্ধান পাই, তিনি জানান সিডিএ ২৫ নম্বরে একটি গ্যারেজে তিনি ময়ূর-সাপ আঁকা রিকশার বডি সরবরাহ করেন। যেহেতু ঘটনাস্থলের কাছের এলাকা, আমাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। সেই গ্যারেজে গিয়ে যত রিকশা পাই, তার সবগুলোর পেছনের বডিতে ময়ূর-সাপ আঁকা।’
‘গ্যারেজ থেকে ভাড়া নেওয়া সকল রিকশার চালককে জড়ো করে পরীক্ষার পর বেশভূষা পাল্টে ফেলা ওসমানকে শনাক্ত করা হয়। গ্যারেজের মালিকও জানান, গত একমাস ধরে তার কথাবার্তা-চালচলন অসংলগ্ন লাগছে। ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সাইফুল নামে আরেক চালক এ ঘটনায় জড়িত বলে তথ্য দেয়। সাইফুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে জানায়, ওসমান শিশুটিকে ধর্ষণের পর খুন করেছে। ঘটনার দুইদিন পর সে সাইফুলের কাছে সব স্বীকার করেছে। এরপর ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনার দায় স্বীকার করে।’
হত্যা-ধর্ষণের বিষয়ে ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসআই কিশোর জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হালিশহর কে-ব্লক থেকে সুরমাকে রিকশায় তুলে নেয় ওসমান। সেটা দেখে সুরমার সমবয়সী দুই বান্ধবী রিকশার সিটের পেছনে লোহার পাদানিতে উঠে যায়। ওসমান আবার রিকশা থামিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
সুরমাকে নিয়ে বড়পোল এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পেছনের একটি দোকান থেকে ৪০ টাকা করে ৮০ টাকা দিয়ে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে। স্থানীয় মনসুর মার্কেটের নিচে বসে দু’জনে বিরিয়ানি খায়। এরপর ওসমান সুরমাকে আবার রিকশায় তুলে নিয়ে পোর্ট কলোনির পরিত্যক্ত বাসাটিতে যায়।
‘ওই বাসায় নিয়ে ওসমান যখন তাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়, তখন সুরমা চিৎকার দেয়। চিৎকার থামাকে ওসমান তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ধর্ষণের পর ওসমান বুঝতে পারে, মেয়েটি মারা গেছে। তখন সে পালিয়ে যায়।’- বলেন এসআই কিশোর মজুমদার
এসআই মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, গ্রেফতার ওসমান চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে ধর্ষণ ও খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ