Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নদী রক্ষায় গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ অক্টোবর ২০২২ ২৩:২৭

ঢাকা: নদী রক্ষার জন্য প্রণীত প্রকল্পগুলো নদী রক্ষার জন্য নাকি নদীকে ধ্বংস করার জন্য তা বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইসঙ্গে নদী রক্ষায় গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের আয়োজনে ‘নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা’ শীর্ষক অষ্টম নদীকথন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন দুপুরে মিরপুরের কাউন্দিয়ায় তুরাগ নদীর তীরবর্তী শ্মশানঘাট এলাকায় এ নদীকথন অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘যদি নদীরক্ষা করা না যায় তাহলে নদীমাতৃক দেশকেও রক্ষা করা যাবে না। তাই নদী দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে এবং নদীকেন্দ্রিক জীবিকা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীরক্ষার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণে প্রথম নদীপাড়ের মানুষদের মতামত নেওয়া দরকার। কারণ তারা ভুক্তভোগী এবং তারাই নদী রক্ষার জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে। নদী রক্ষায় গণমানুষের সম্পৃক্ততা, নদী নিয়ে যারা কাজ করে তাদের জবাবদিহিতা এবং সর্বোপরি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এতে নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় নদীকথনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘নগরায়নের একটি সেবা হলো মাছ সরবরাহ নিশ্চিত করা যা মূলত জেলে সম্প্রদায় করে থাকে। কিন্ত নদীতে পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় এই জেলে সম্প্রদায় বছরে আট মাস বেকার থাকে, যার প্রধান কারণ নদীদূষণ।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নদীকেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা কমে যাওয়ার ফলে মানুষের আয়ের পথও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দূষণের কারণে নদীর সাথে যাদের জীবন ও জীবিকা জড়িত তারা আজ অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে। এই সম্প্রদায়কে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করা এবং জেলে সম্প্রদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে আলোচনায় এনে উন্নয়ন পরিকল্পনা করলে নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব।’

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসাইন বলেন, ‘নদী দূষণের কারণে জীবিকা হারিয়ে যাচ্ছে। আর এতে জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। ঢাকার তুরাগ নদী সবচেয়ে দূষিত নদী কিন্তু এই নদীর সাথে জড়িত মাছ, কৃষক এবং জেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন তুরাগ নদী রক্ষার উদ্যোগ এই সমস্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়ের সঙ্গে মাঝি সংগঠনের মধ্যে একটি কার্যকর পার্টনারশিপ তৈরির মাধ্যমে নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। সর্বোপরি সমন্বিত উদ্যোগ গহণের মাধ্যমে নদীর উপরে গণমানুষের যে অধিকার তা নিশ্চিত করতে হবে।’

আলোচ্য বিষয়ে আমজাদ আলী লাল বলেন, ‘নদী দূষণের কারণে নদীকেন্দ্রিক পেশাগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে। সাগর পাড়ের জেলেদের কার্ড দেওয়া হয়, অথচ যারা ছোট নদীর পাড়ে থাকে তাদের জীবিকা রক্ষা এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা করার কোনো উদ্যোগ নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী করবে তা নিয়ে ভাবনা হয়। তবে কোনো সমাধান খুঁজে পাই না।’

আমিন বাজার ব্রিজ ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ আলী লাল বলেন, ‘এই এলাকার মুনষের পেশা হলো মাছ ধরা এবং বিক্রি করা। আগে এলাকার মানুষ প্রচুর মাছ পেত এবং অনেক আয় করত। তাই এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করেনি। কিন্তু এখন এই নদীর পানি দূষিত। তাই এখানে মাছ নাই বললেই চলে। বর্তমানে এখানকার মানুষ বেকার জীবন যাপন করছে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মাঝি নিত্য বাবু রাজবংশী এবং নদী দূষণ রোধে কাজ করেন এরকম স্থানীয় কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

নদী-রক্ষা মানুষের সম্পৃক্ততা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর