Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সিট কি প্রশাসন দেয়? হলে কিভাবে উঠতে হয় তা জানস না?’

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৪ অক্টোবর ২০২২ ০৯:১২

ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা এবং রুমের বৈধ সিট থেকে পিটিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা রুম দখল করে রাখার পর হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রুমটি সিলগালা করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমার রুমে এসে এবং আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। কিছু সময় পর হল ছাত্রলীগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কিছু কর্মী এসে আমাকে বলে, ‘হলের সিট কি প্রশাসন দেয়?’, ‘হলে কিভাবে উঠতে হয় তা জানস না?’ এসব বলে এবং আমিসহ আমার বন্ধুদের মারধর করে রুম থেকে বের করে দেয় এবং রুমে তারা অবস্থান নেয়।”

বিজ্ঞাপন

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৬২ নম্বর রুমে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সাইফুল ইসলাম (ফারহান)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযুক্তরা হলেন— ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের তাওহীদুল ইসলাম, ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শরিফুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৮-১৯ সেশনের শাখাওয়াত ওভি, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শেখ ইমরান ইসলাম ইমন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৯-২০ সেশনের মুনতাসীর হোসেনসহ আরও অনেকে। অভিযুক্ত সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাইফুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আমাকে হল থেকে এই রুমে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই আমি বিকেলের দিকে রুমে আসি এবং বিছানাপত্র নিয়ে সিটে উঠি। এসময় আমার সঙ্গে আমার কয়েকজন বন্ধুও ছিলো। সন্ধ্যার কিছু সময় পর হলের ছাত্রলীগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কিছু কর্মী এসে আমাকে মারধর করে রুম থেকে বের করে দেয়।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা রুমটি আটকে রাখেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কয়েকজন কর্মী অবস্থান নিয়ে ভেতর থেকে রুম বন্ধ করে রাখেন তারা। একপর্যায়ে হল প্রশাসন থেকে দু’জন স্টাফ পাঠালে তাদের কথার তোয়াক্কা করেননি তারা। পরে মুহসীন হলের দু’জন হাউস টিউটর আইনুল ইসলাম ও ইমাউল হক সরকার রুমের সামনে এলেও আধঘণ্টা তারা রুমের দরজা খোলেননি।

এসময় রুমের ভেতরে অবস্থান করা ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন- ইংলিশ ফর স্পিকার অফ আদার ল্যাংগুয়েজের আরাফাত হোসেন মাহিন, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এনামুল হক পলাশ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের মারুফ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শরীফুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিবলী সাদিক, ইসলামিক স্টাডিজের মুনতাসির হোসেন। তারা সকলেই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

পরে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনকে ফোন করা হলে কয়েকজন সিনিয়র কর্মী এসে ভেতরে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীদের দরজা খোলার নির্দেশ দেন। পরে তারা দরজা খুললে ওই দুই শিক্ষক অবৈধভাবে দখল করে রাখা রুমটি তালাবদ্ধ করে দেন।

আধঘণ্টা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রসঙ্গে আবাসিক শিক্ষক ও কক্ষ বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে শিক্ষকদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি অপরাধ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চয় ব্যবস্থা নেব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ওই রুমে তিনমাস আগে আমাদের ছেলেরা উঠছিলো। এক বড় ভাই তাদের সিট দিয়ে গেছে। পরে রকি নামের এক বড় ভাই নাকি বহিরাগত ছাত্র তুলতে চেয়েছিলো, তার কারণে ঝামেলা হইছিলো। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’

প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে রুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে রুমটি বৈধ শিক্ষার্থীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/আরআইআর/এমও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর