‘ডান হাত নেই, তাই বাম হাতে নিলাম ভাইয়া’
২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৪৮
।। সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১৭/বি নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন খালিদ হাসান হৃদয়। হৃদয়কে দেখতে তার কেবিনে যাচ্ছিলাম। কেবিনে ঢোকার আগেই দেখি বারান্দায় একটি চেয়ারে সে বসে আছে। পাশে মা শাহিদা বেগম দাঁড়িয়ে হৃদয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
কাছে যেতেই হৃদয় বলে ‘কেমন আছেন।’ আমি বললাম, ‘ভাল আছি।’ জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কেমন আছ?’ উত্তরে হৃদয় বলল, ‘ভালো আছি ভাইয়া। বারান্দায় বাতাসে বসে আছি। রুমের ভেতরে আর ভালো লাগে না।’
হৃদয় বলে, ‘বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে। হাসপাতাল আর ভালো লাগছে না।’ এরপর পাশেই একটা খালি টুলে আমাকে বসতে বলল হৃদয়। সেখানে বসলাম। আমাকে জিজ্ঞাস করল, ‘ভাইয়া আপনি কোন পত্রিকায় কাজ করেন? আমি একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে দিতে সে বলল, ‘ভাইয়া মনে কিছু করবেন না, আমার তো ডান হাত নেই। ডান হাত দিয়ে তো নিতে পারলাম না, তাই বাম হাত দিয়ে নিলাম।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হৃদয়ের মা শাহিদা বেগম। বললেন, ‘এ রকম কথা শুনলে কার না খারাপ লাগে। আমি তো ওর মা, কেমনে সহ্য করি?’
শাহিদা বেগম বলেন, ‘হৃদয়রা তিন ভাই-বোন। দুই বোন বড় আর হৃদয় ছোট। একটা মাত্র ছেলে আমার। হৃদয়ের বড় বোন শারমিন আক্তার তার বিয়ে হয়ে গেছে। মেজ মেয়ে তামান্না আক্তার সে খুলনার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএ পড়ছে। ওরা দু’বোনই খুব ভালো ছাত্রী। বড় মেয়ের বিয়ে হওয়ায় পড়ালেখা থেমে গেছে।’
হৃদয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গ্রামের লোকজন ওকে অনেক আদর করে। ছোট বেলায় কখনও কারও সঙ্গে মারামারি করেনি সে। সবার আদরের সে।’
‘লোক মুখে শুনতাম মা-বাবা কারো ক্ষতি করলে সেটা ছেলে-মেয়েদের ওপর প্রভাব পড়ে। কিন্তু কোনদিন কখনো কারো ক্ষতি করিনি। আল্লাহ কেন আমার ছেলের এমন ক্ষতি করল। জানি, আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন। কিন্তু আমার হৃদয়ের জন্য আল্লাহ কি মঙ্গল রেখেছেন জানি না।’
গত ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর বেতগ্রাম এলাকায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে জানালার পাশে বসে থাকা হৃদয়ের এক হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে দিনই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হৃদয়ের বাবা রবিউল ইসলাম জানান, হৃদয় দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে সে টুঙ্গিপাড়া একপ্রেসে হেলপারের কাজ নেয়। ঘটনার সময় সে বাসে উঠে পরিবহন অফিসে যাচ্ছিল।
হৃদয়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঢামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান জানান, হৃদয় এখন অনেক ভালো আছে। হাতের ক্ষত জায়গাও শুকিয়ে আসছে। তবে ইনফেকশনের ভয় এখনো আছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে এখনো এক থেকে দুই মাস লাগবে।
সারাবাংলা/এসএসআর/একে
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook