Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, ১০ মাসে আক্রান্ত সাড়ে ২৩ হাজার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৫৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বর্ষায় বাড়ে। কিন্তু এবার কোনো মৌসুম মানছে না এডিস মশাবাহিত এই রোগটি। শীত প্রায় আসি আসি। তবুও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও।

সরকারি হিসাব বলছে, গত দুই বছরের চেয়েও এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এদিকে, বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংক বলছে, আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। যদিও ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, সর্বোচ্চ সামর্থ দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের গত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ৫৯২ জন। আক্রান্তের দিক থেকে যা গত দুই বছরের চেয়ে বেশি। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে ১৮ জন, ছয় থেকে নয় দিনের মধ্যে ছয়জন এবং নয় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তিনজন মারা গেছে।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ২ হাজার ৭১৫ জনে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশে বিশেষ করে শহর এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে ঋতুভেদে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য। জানা গেছে, এই রোগে প্রতি বছর যতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয় তার ২৫ শতাংশ হয় বর্ষাকালে। আর শীতকালে হয় ১৪ শতাংশ। এই তথ্য বলে দিচ্ছে, বর্ষার মাত্রা বাড়লে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ডেঙ্গু মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি কী?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরের চেয়ে এবার বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি দেখা যাচ্ছে। গেল দুই বছর আক্রান্তের হার ২০ হাজারের মধ্যে থাকলেও এবার তা ছাড়িয়ে গেছে। এবার মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। এটা চিন্তার বিষয় বটে।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে জনসচেতনা বাড়াতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে টিভিসি করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশনে ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘ভিয়েতনামে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর দেশটিতে এই সংখ্যা ছিল তিন লাখেরও বেশি। আমাদের এখানে আক্রান্তের সংখ্যা যখন ছয় হাজার, তখন ফিলিপাইনে ৮০ হাজারের মতো। অষ্ট্রেলিয়াতে, মালয়েশিয়াতেও মানুষ ব্যাপক হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে।’

ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করলেসেক্ষেত্রে সরকার কী করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেসব টেকনোলজি আছে আমরা সেগুলো ব্যবহার করে মশক নিধন করছি। সিঙ্গাপুর আমাদের থেকে অনেক উন্নত দেশ। তাদের থেকে আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের মেয়ররা তাদের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের সুপারভিশনে নিয়মিত কাজ করছে। তারপরেও আমরা শতভাগ মানুষকে সচেতন করতে পারছি না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। তারপরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হচ্ছে। যা দুঃখজনক।’

তথ্যানুযায়ী, এ বছর দেশের ৫০ জেলার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগরের পর এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। অন্যদিকে, জেলা হিসেবে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির হার বেশি মিরপুর ও উত্তরা এলাকায়। এছাড়াও মুগধা, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডি এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

আক্রান্ত ডেঙ্গু প্রকোপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর