মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন: সংস্কৃতিমন্ত্রী
২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:০৮
।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাবি: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে যতটুকু গবেষণা হয়েছে, যতটুকু লেখালেখি হয়েছে, সেটি অপ্রতুল, আংশিক এবং খণ্ডিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশ থেকে এক কোটি শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানকার মানুষ তাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস আমি কোনো গ্রন্থেই পাইনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে গবেষণা প্রয়োজন।’
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংগঠনটি দুইদিনব্যাপী ১২ তম এই দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক এখনও অনাবিষ্কৃত উল্লেখ করে এসময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে ক্ষেত্র রয়েছে, বিভিন্ন দিক রয়েছে সেগুলো এখনো অনাবিষ্কৃত। এগুলো যদি সঠিকভাবে লেখা না হয়, তাহলে আমাদের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এখানে আমাদের ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। আমাদের বুদ্ধিজীবী এবং গবেষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের ইতিহাস রচনা করতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধ উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের ইতিহাস দীর্ঘদিনের এবং এটি একদিকে যেমন আমাদের বাঙালি হিসেবে ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, অন্যদিকে আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াইও বটে। এই দুইটি বিষয় নিয়েই আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে উঠেছে। এখানে যেমন সামরিক এবং আধা-সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ ছিল, তেমনি এদেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে নারীর অবদানকে ইতিহাসে ঠাঁই দিতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বির্নিমাণে ও সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণে এবং বাঙ্গালি সংস্কৃতির মানুষদের একত্রিতকরণে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গুজব, অপপ্রচার এবং অপসংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয় উল্লেখ করে উপাচার্য আরও বলেন, ‘বর্তমানে উগ্রতাবাদ ও জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে গেছে। এই গুজব, অপপ্রচার, অপসংস্কৃতি, ইতিহাস বিকৃতি রোধে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ অতীতেও ভূমিকা রেখেছিল, সামনেও ভূমিকা রাখবে।’
সম্মেলনে ভাষাভিত্তিক ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে গবেষণার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক মো. গোলাম রব্বানিকে ‘বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার’ দেওয়া হয় । তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার স্ত্রী পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
এই সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনের সদস্য ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসবিদ, শিক্ষক এবং গবেষকরা যোগ দিয়েছেন। দুইদিনব্যাপী এই সম্মেলনের ১২ টি অধিবেশনে ইতিহাসের বিভিন্ন শাখায় প্রায় শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে।
সারাবাংলা /টিআর/এমআইএস
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook
আসাদুজ্জামান নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ মহান মুক্তিযুদ্ধ সংস্কৃতিমন্ত্রী