দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আকাঙ্ক্ষা
১৬ অক্টোবর ২০২২ ২২:৫৭
ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে আকাঙ্ক্ষা। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও উন্নয়ন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা অন্যন্য। যেমন শিশু মৃত্যুর হার কমে যাওয়ায় বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। এছাড়া ঙ্ক্ষা আছে বলেই শিশু জন্মদানের হার কমেছে, নারীদের ঘরের বাইরে কাজে যোগ দেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং মেয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তির হারও বেড়েছে। দেশের গরিব পরিবারের নারীরা ভালো থাকার আকাঙ্ক্ষায় যেকোনো উন্নয়নকে গ্রহণ করেছে। যেমন খাবার স্যালাইন হোক আর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হোক বা টিকা দেওয়াই হোক- সবকিছুকেই সফল করতে ভূমিকা রেখেছে। ‘এ্যাজপ্যারেন্টাল মোমেন্টাম: দ্য ডেভেলপমেন্ট স্টোরি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিশেষ সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
রোববার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক এ ইলাহী চৌধুরী এবং মাহির এ রহমান। আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের আশা বা আকাঙ্ক্ষা মানুষের জীবন পরিবর্তনে ভুমিকা রেখেছে- এটা যেমন সত্যি তেমনি তাদের এই পরিবর্তনে সরকারি বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রেখেছে। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, সেবা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ মানুষের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে পূর্ণতা দিয়েছে। এখানে যদি সরকার বিনিয়োগ না করতো তাহলে ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতো না। যদিও আমরা কর্মসংস্থানে ভালো করতে পারিনি।’
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘কোন দেশকে এগিয়ে যেতে হলে আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটাতে হবে। কেননা সমাজের একজনকে দেখে আরেকজনের উন্নতি করার আকাঙ্ক্ষা যেমন তৈরি হতে পারে, তেমনি অতি আকাঙ্ক্ষায় দেখা যাবে প্রতারণা, মাস্তানি, রেন্ট সেকিং হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ণয়ে শুধু অর্থনীতির মূল ধারার দিয়ে মূল্যায়ন করলে হবে না। একটি দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কৃষি উৎপাদনসহ সবকিছুই মূল্যায়ন করলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। সেটিই উঠে এসেছে আজকের গবেষণায়। আমাদের দেশে ধর্ম বা জাতপাতের বিবেধ নাই বলেই এত অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।’
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণের ফলাফল আমাদের অনুমিত ধারণাগুলোকে সমর্থন করে। আমরা দেখেছি যে শিশু মৃত্যু হার কমার সঙ্গে সঙ্গে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। যদিও এই ফলাফলটি পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্ববহ নয়। নারীদের মাধ্যমিক শিক্ষার হার এবং বিদ্যুতায়নের হার মাথাপিছু আয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। এই ফলাফলটি পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমাদের লব্ধ ফলাফল নির্দেশ করে যে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাথাপিছু আয় বাড়ে। যা আমাদের ধারণাকে যথার্থতা দেয়। মাথাপিছু আয়ের ওপর বিনিয়োগেরও পরিসংখ্যানগত গুরুত্ব এবং ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে সময়ের সঙ্গে সূচকগুলোর গতি ধারায় কিছু আশাব্যঞ্জক আকস্মিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি যে, বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী উন্নয়ন গল্পের পেছনে এই গতিপ্রেরণার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের প্রস্তাবিত গতিপ্রেরণার এই ধারণা শুধু অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও বিভিন্নভাবে আলোচনা হয়েছে।’
মাাহির এ. রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের এই গবেষণায় অর্থনৈতিক গবেষণা ক্ষেত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূণৃ প্রাসঙ্গিক কাজগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় আলোচিত এই ধারণাগুলোকে সম্মিলিত করার চেষ্টা করেছি। জাতীয় পর্যায়ের আয় এবং সমৃদ্ধি এই পরিবারগুলোরেই সমষ্টি। সাধারণত, আকাঙ্ক্ষা সঞ্চারিত গতিপ্রেরণা যত বেশি হবে, জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি তত দ্রুত হবে। অর্থাৎ প্রারম্ভিকভাবে কোনো দেশের মাথাপিছু আয় কম থাকলেও যদি দেশটির আকাঙ্ক্ষা সঞ্চারিত গতিপ্রেরণা বেশি হয়, তবে সেই দেশটি আয়ের দিক থেকে সমকক্ষ বা তুলনামূলকবাবে শক্তিশালী অথচ কম গতিপ্রেরণা সম্পন্ন দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।’
পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের প্যারাডক্স বলা হয়। আমি মনে করি, সেটি এসেছে এই আকাঙ্ক্ষা থেকে। দেশের সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়নের ফলে সম্ভব হয়েছে। দেশের কৃষক, শ্রমিক, সরকারি, বেরসরকারি উদ্যোগ এমনকি পরিবারগুলোর আকাঙ্ক্ষাও মাথাপিছু আয় বাড়াতে কাজ করেছে।’
ড. বিনায়ক সেন বলেন, “বরীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কোন দেশকে গরিব বলিব। সব দেশেইতো গরিব আছে।’ তবে যে দেশের গরিব থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা বা আকাঙ্ক্ষা নেই সেই দেশই প্রকৃত গরিব। কিন্তু সেই অর্থে গরিব ছিলাম না। এখন বাংলাদেশে সরকারি চাকরি অনেক আকর্ষণীয় হয়েছে। এর ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। অনেক শিক্ষিত বেকার বসে আছেন একটি সরকারি চাকরির জন্য।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম