ওরা জিয়াকেই পাকিস্তানের চর বলে, আমি তো কোন ছার: ফখরুল
১৬ অক্টোবর ২০২২ ২৩:১৮
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমি একটা কথা বলাতে ওরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আমাকে ওরা পাকিস্তানের চর-টর বানিয়ে দিল। ওরা জিয়াউার রহমানকে পাকিস্তানের চর বলে, আমি তো কোন ছার। যিনি স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তাকেই তো তারা পাকিস্তানের চর বলেন, আমি তো ক্ষুদ্র মানুষ।
রোববার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে হোটেল সিক্স সিজনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরাম’ নামে গবেষণামূলক সংগঠন ‘আত্মপ্রকাশ’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাস্তবতা এটা যে, তাদের দুঃশাসন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। অতীতের সব শাসন ব্যবস্থাকে তারা ছাড়িয়ে গেছে। কলোনি আমলে বৃটিশ রুল, তারপরে পাকিস্তান রুল, তার পরে এরশাদের রুল-সব কিছুকে ছাড়িয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দুঃশাসনে বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে পঙ্গু করে ফেলেছে, ব্যর্থ করে ফেলেছে।’
৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতেই আওয়ামী লীগ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা বাতিল করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেশে অস্থিতিশীলতার জন্য ১/১১ হলো। তখন তাদের স্লোগান ছিল মাইনাস টু। আসলে এটা ছিল মাইনাস ডেমোক্রেসি। গণতন্ত্রকে দূরে রাখো, নিয়ন্ত্রিত শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা কর। সেই একই সূত্র থেকে, একই ষড়যন্ত্র থেকে, একই চক্রান্ত থেকে পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ। এটা আমাদের বুঝতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এটা হঠাৎ করে বাতিল করেছে, তা নয়। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেছে যে, কীভাবে নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা যায়। এটা হচ্ছে তাদের পরিকল্পনা, ব্লু প্রিন্ট।’
তিনি বলেন, ‘এই জাতির ভবিষ্যতের জন্য, সত্যিকার অর্থে একটা স্টেবল পলিটিক্যাল স্টাকচারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক দরকার। যদি কাঠামো ঠিক না থাকে, তাহলে কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাবেন। এ কারণেই যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হলো সেইদিন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেস কনফারেন্সে করে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে চিরস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল। স্টেবেলিটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ শুনলাম ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, বিআরটি (বাস রেপিড ট্রন্সপোর্ট) প্রকল্প এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। অর্থাৎ আপনার এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত। এই কথাটা বলতে বলতে আমি হয়রান হয়ে গেলাম ভাই। কালকে ময়মনসিংহ থেকে এসেছি। কাপাসিয়া থেকে আমার আসতে লেগেছে ৬ ঘণ্টা, উত্তরা থেকে আমি ঢাকায় আসি আড়াই ঘণ্টা লাগে। আমার বাসা উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টার থেকে এয়ারপোর্ট আসতে পুরো এক ঘণ্টা লাগে।’
‘এখন ওবায়দুল কাদের বলছেন যে, ওটা তাদের গলার কাঁটা হয়ে গেছে। নির্লজ্জ মানুষেরা। এই কথা বলার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কারণ, এই প্রকল্প তারা নিয়েছেন। তারা ১০ বছর ধরে এই পুরো এলাকার মানুষ, পুরো নর্থ বেঙ্গলের মানুষ, পুরো ঢাকার মানুষকে অসহ্য রকমের একটা যন্ত্রণা দিচ্ছেন’- বলেন মির্জা ফখরুল।
সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আলম জর্জের সভাপতিত্বে ও উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম রফিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, জহুরুল ইসলাম বাবু, পাবনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরশেদ আলম, সচেতন নাগরিক ফোরামের এজেডএম মোরশেদ আল মামুন লিটন, আশরাফুর রহমান, এএইচ আবরার ফাহিম, আবদুল্লাহ জামাল চৌধুরী প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম