Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রোডম্যাপ চূড়ান্ত অক্টোবরেই

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৭

ঢাকা: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনেই। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। তবে তার আগে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সেইসঙ্গে থাকতে পারে সরকারবিরোধী অপতৎপরতা। এসব বিষয় রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার অঙ্গীকার নিয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আসছে ২৮ অক্টোবরে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে সম্মেলনসহ ১১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির নেতারা।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্র জানায়, দলের জাতীয় সম্মেলনসহ অন্যান্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে ১১টি এজেন্ডা নিয়ে সাংগঠনিক রূপরেখা নির্ধারণে ২৮ অক্টোবর বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বৈঠকে ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে জনসভাসহ বিভাগীয় সমাবেশ এবং জাতীয় সম্মেলনসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া সরকারবিরোধী অপতৎরতা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে সারাদেশে রাজনৈতিক শক্তির মহড়া দিতেও রূপরেখা ও কৌশল ঠিক করতে যাচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি তূণমূল নেতাদের কথা শুনতে গণভবনে ধারাবাবাহিক বৈঠক করতে পারেন। সেটিরও রূপরেখা চূড়ান্ত হতে পারে বৈঠকে।

বিজ্ঞাপন

৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যে ৩২টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথমদিকে ধারাবাবাহিকভাবে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির। এ বিষয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৮ অক্টোবর গণভবনে পার্টির সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে। এই সভায় জেলহত্যা দিবস, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের কর্মসূচি পালনসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। আমরা বিভাগগুলোতে কিছু জনসভা ও সমাবেশ করব। সে বিষয়েও আলোচনা হবে। ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। সে বিষয়টিও এজেন্ডোয় রয়েছে। সেটি নিয়েও আলোচনা হবে। ওইদিন সম্মেলনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হবে।’

তিনি আরও নানক জানান, ‘আমরা এই বিষয়গুলো নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। আসছে বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা আজও পার্টির সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। গতকালও আলোচনা করেছি। আলোচনা করে একটি সার-সংক্ষেপ মাননীয় নেত্রী ও পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দেব। উনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। ২৮ অক্টোবর চূড়ান্ত রূপ নেবে। এর আগে কিছু বলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে বিকেল ৪টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সম্মেলনসহ ১১টি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

সাংগঠনিক কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত করে নভেম্বর থেকে রাজনীতির মাঠে দলীয় শক্তির মহড়া দিতে চায় আওয়ামী লীগ। তাই নভেম্বেরের মধ্যে জেলাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরপর ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনও ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায় দলটি। জেলা সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২০টির অধিক জেলায় তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রতি তিন বছর পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইতোমধ্যেই দলীয় হাইকমান্ড জানিয়ে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণভাবে সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরুরও নির্দশ দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে বিভিন্ন উপকমিটির খসড়া তালিকা প্রণয়ন করতে ইতোমধ্যে দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলার সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এদিন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের (আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পূর্বের স্থান) মাঠে এই সম্মেলনে বিশাল জনসমাগমের মধ্য দিয়ে রাজপথে শক্তির মহড়া দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলার সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন মাননীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা জেলার এই সম্মেলন নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতির পরিকল্পনা নেওয়া আছে।’

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনও ৩৩টি জেলা সম্মেলন বাকি। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ হতে যাচ্ছে ২৮নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে।

কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে অনুযায়ী আগামী ২৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। তিন বছর মেয়াদী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৪ মার্চ। একই বছর ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১ মার্চ। তেমনি তাঁতী লীগের মেয়াদ হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।

ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী। চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদচ্যুত হন তারা। তাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারমুক্ত করা হয়। জয়-লেখক প্রায় তিন বছর ধরে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগের সম্মেলনের মেয়াদও আগামী নভেম্বর মাসে শেষ হতে যাচ্ছে।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত সম্মেলন সাংগঠনিক রূপরেখা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর