Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অভিশাপমুক্ত হয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ অক্টোবর ২০২২ ১৮:১৩

ঢাকা: বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যায় জড়িতদের বিচার হয়েছে বলে দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এতে আমরা শুধু অধিকার ফিরে পাইনি, বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হয়েছে। আর অভিশাপ মুক্ত হয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২২’ এর উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অন্যান্যরা।

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট মা বাবা ভাইকে হারানোর ঘটনার স্মৃতিচারণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ছোট ভাই শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রাসেল আমাদের চার ভাইবোনের কাছে ছিল খেলার পুতুলের মতো। তাকে নিয়েই আমরা সবসময় ব্যস্ত থাকতাম।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? ১৫ আগস্ট আমরা আপনজন হারিয়েছি।‌ কেউ বাবা-মা হারিয়েছে, কেউ বোন হারিয়েছে, কেউ ভাই হারিয়েছে। আমাদের অপরাধটা কী ছিল? আমরা কেউ বিচার চাইতে পারব না। আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু হয়। মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ- কত কিছু হয়। কই তখন কেউ তো আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

অল্প বয়সে রাসেলের জীবনপ্রদীপ যাওয়ার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশু হত্যা, নারী হত্যা, রাষ্ট্রপতিকে হত্যা— এই হত্যার যাতে বিচার না হয় সেজন্য আইন করে রাখা হয়। কেউ খুনিদের বিচার করতে পারবে না। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। অর্থাৎ আমি আমার মা-বাবা-ভাইসহ যাদের হারিয়েছি বিচার চাইতে পারব না, মামলা করতে পারব না। আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম। আমাদের দেশেও আসতে দেয়নি। আমাদের ছয়টা বছর রিফিউজি হয়ে থাকতে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘তখন তো কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। হ্যাঁ আমার দল এবং বাংলার জনগণ ছিল। কিন্তু যারা এই ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, তাদের সহযোগিতা করেছিল বা চক্রান্তের সঙ্গে ছিল তারাই ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া, প্রমোশন দেওয়া— এমনি যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই অন্যায়, অবিচারগুলো আমি নিজের চোখে দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ঠিক সেটাই হয়েছিল আমাদের ব্যাপারে। অনেকদিন পরে বিচারকার্য যখন শুরু করালাম তখনও দেখেছি হাইকোর্টের বড় বড় জজ সাহেবরাই মামলা করতে চাননি। বিব্রতবোধ করছেন। এই বিব্রতবোধ হওয়াটাও তো আমার চোখে দেখা।’ স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতার ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা আর বিচারহীনতার কালচার শুরু হয়েছিল সেখান থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জজ সাহেবদের মধ্যে যারা বিব্রতবোধ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন খুব বড় বড় দার্শনিক হয়ে গেছেন। আমি দেখি, শুনি। হ্যাঁ, আমি কিছু বলি না। কারণ, আমার একটাই লক্ষ্য— এই দেশটাকে বিশ্ব দরবারে একটা অবস্থান নিয়ে আসা। সেই লক্ষ্যটাই অর্জন করার জন্যই স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে।’

১৫ আগস্ট ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছে যেমন- জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া প্রত্যেকেই খুনিদের মদদ দিয়েছে। পুরস্কৃত করেছে। এমনকি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সে খুনি পাশা এবং হুদাকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের রাজনৈতিক দল করেছিল। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলেন। খালেদা জিয়া খুনি রশিদ এবং হুদাকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত করে সংসদে বসিয়েছে। তাদের মুখেই ভোটের কথা শুনতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেল জিয়া সেনাপ্রধান হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল। তাদের মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। অথচ এদের হাতে দিয়ে বার বার আমার উপরে আঘাত এসেছে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘কিছু নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা। বিচারহীনতার যে কালচার শুরু হয়েছিল- সেখান থেকে জাতি আজ মুক্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশ যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেই আদর্শ নিয়ে যেন আগামী দিন চলতে পারে। সুকান্তের ভাষায় এই কথাই বলতে চাই যে— বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব আমরা চাই। যুদ্ধ চাই না, ধ্বংস চাই না। অস্ত্রের প্রতিযোগিতা চাই না। আমরা শান্তি চাই। কোনো শিশু শরণার্থী হোক- তা চাই না। বুলেটের আঘাতে কোনো শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যাক, তার ছোট্ট দেহ ক্ষত-বিক্ষত হোক- সেটাও চাই না।’

‘বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক। আমার দেশের মানুষ ভালো থাকুক। আমার দেশের শিশুরা, ছোট্ট ছেলেমেয়েরা সুন্দর জীবন পাক- সেটাই আমার লক্ষ্য’— উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ শেখ রাসেল দিবস শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর