বে-টার্মিনালের ঢেউ প্রতিরোধক-চ্যানেল খননের নকশা হচ্ছে
১৯ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগে বহুল আলোচিত বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে একধাপ অগ্রগতি হয়েছে। টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ (ঢেউ প্রতিরোধক বাঁধ) এবং চ্যানেল ড্রেজিংয়ের (চ্যানেল খনন) জন্য দেশি-বিদেশি তিন সংস্থাকে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জার্মানির সেলহর্ন ইঞ্জিনিয়ার্সেলসক্যাফ্ট এবং বাংলাদেশি দু’টি প্রতিষ্ঠান একোয়া কনসালট্যান্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ও কেএস কনসালটেন্টস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকালে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এবং সেলহর্নের প্রতিনিধি ম্যানফ্রেড ভস ও কেএস কনসালটেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে বে-টার্মিনালের জন্য ব্রেকওয়াটারের বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়ন করবে। এছাড়া সর্বশেষ আন্তর্জাতিকমান অনুসরণ করে চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রকৃত আয়তন মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন জমা দেবে।
গত ৩১ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় যৌথ উদ্যোগে পরামর্শক নিয়োগে বন্দরের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে ব্রেক ওয়াটার এবং অ্যাক্সেস চ্যানেল ড্রেজিং কার্যক্রমের জন্য বিস্তারিত নকশা, চিত্র ও আনুমানিক ব্যয় নির্ধারণ করে টেন্ডার নথি প্রস্তুত করবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে সিইপিজেডের পেছনে সাগরপাড় থেকে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় এই টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক দশক আগে পরিকল্পনা হলেও এখনও নির্মাণের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৬ সালে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কারিগরি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে এ টার্মিনাল গড়ে তোলার উপযুক্ত বলে মত দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র মতে, বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। কিন্তু বে-টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি। বে-টার্মিনালে মোট ১৩টি জেটি থাকবে। বে-টার্মিনালে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের পূর্ব দিকে রয়েছে পোর্ট অ্যাকসেস রোড ও রেলপথ।
বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বার বার বে-টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরুর তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম